ঢাকাশনিবার , ২৮ জানুয়ারি ২০১৭
  • অন্যান্য
  1. অন্যান্য
  2. অপরাধ-আদালত
  3. অর্থনীতি
  4. আন্তর্জাতিক
  5. আমাদের পরিবার
  6. আলোচনার শীর্ষে
  7. কবিতা
  8. খেলাধুলা
  9. জাতীয়
  10. তথ্যপ্রযুক্তি
  11. দোয়া প্রার্থনা
  12. নারী ও শিশু
  13. বিনোদন
  14. ভিডিও
  15. মতামত বিশ্লেষণ
আজকের সর্বশেষ সবখবর

৪০০ কোটি টাকা গচ্চা

সময়ের সংবাদ
জানুয়ারি ২৮, ২০১৭ ৩:২৮ পূর্বাহ্ণ
Link Copied!

সময়ের সংবাদ: কৃষিভিত্তিক, খাদ্য প্রক্রিয়াজাত ও তথ্যপ্রযুক্তি খাতে নতুন উদ্যোক্তাদের উৎসাহিত করতে ২০০১ সালে সরকার ইক্যুইটি অ্যান্ড এন্টারপ্রেইনারশিপ ফান্ড (ইইএফ) গঠন করে। এই বিশেষ তহবিলের উদ্দেশ্য ছিল, এসব খাতে উদ্যোক্তাকে ঋণের পরিবর্তে মূলধন দেওয়া। প্রকল্পে সরকারের ৪৯ শতাংশ এবং ৫১ শতাংশ মালিকানা উদ্যোক্তার। শুরুর ৮ বছর পর সরকারের বিনিয়োগ ফেরত দেওয়ার কথা। কিন্তু অনেক উদ্যোক্তাই মেয়াদ শেষে সরকারকে টাকা ফেরত দিচ্ছেন না। এ পর্যন্ত প্রায় ৩০০টি প্রকল্পের অর্থ ফেরত দেওয়ার সময় হয়েছে। এর মধ্যে ৮ বছর আগে অর্থ ফেরত দেওয়ার মেয়াদ ছিল এমনও অনেক প্রকল্প রয়েছে। আদায়যোগ্য প্রায় ৪০০ কোটি টাকা উদ্যোক্তারা ফেরত দেননি। উদ্যোক্তাদের অনেককেই এখন খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। আবার অনেকে ইচ্ছে করেই যোগাযোগ করছেন না। জানাচ্ছেন না প্রকল্পের আয়-ব্যয়ের তথ্য। বারবার নোটিশ দিলেও সাড়া দিচ্ছেন না প্রকল্পের উদ্যোক্তারা। এ রকম পরিস্থিতিতে এই বিশেষ উদ্যোগ শেষ পর্যন্ত চালু রাখা যাবে কি-না

তা পর্যালোচনা করছে সরকার। আগামী মার্চের পর নতুন করে আর বিনিয়োগ না করার আপাতত সিদ্ধান্ত হয়েছে। একই সঙ্গে যেসব প্রকল্প থেকে অর্থ ফেরত পাওয়া যাচ্ছে না, তাদের অনেকের বিরুদ্ধে মামলা করার

এবং বেশ কিছু প্রকল্পের শেয়ার তৃতীয় পক্ষের কাছে বিক্রির সিদ্ধান্ত নিয়েছে তহবিলটির ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে থাকা ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অব বাংলাদেশ (আইসিবি)। আইসিবি সূত্র জানায়, গত ১৬ বছরে এই তহবিল থেকে সরকার ৮৮২টি প্রকল্পে প্রায় সাড়ে ১৩শ’ কোটি টাকা বিনিয়োগ করেছে। এর মধ্যে আদায়যোগ্য বিনিয়োগের ৩১ শতাংশ ফিরে এসেছে। আর সরকার মুনাফা পেয়েছে মাত্র ২ কোটি টাকা। যেসব প্রকল্প থেকে এখনও বিনিয়োগ ফেরত আসেনি, তাদের চিহ্নিত করে সরকারি অংশের শেয়ার বিক্রি করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। তৃতীয় পক্ষের কাছে শেয়ার বিক্রির জন্য প্রাথমিকভাবে মৎস্য ও ডেইরি খাতের ৫৫টি প্রকল্প চিহ্নিত করা হয়েছে। আর নির্ধারিত সময়ে অর্থ ফেরত দিতে ব্যর্থ কিছু প্রকল্পের উদ্যোক্তাদের বিরুদ্ধে মামলা করা শুরু করেছে।

ইইএফে অনিয়ম নিয়ে আগেই সরকারকে সতর্ক করে বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা পরিষদ (বিআইডিএস)। ইইএফের কিছু প্রকল্প সরেজমিন ঘুরে ২০১৪ সালে একটি প্রতিবেদন তৈরি করে কেন্দ্রীয় ব্যাংককে দেয় বিআইডিএস। প্রতিবেদনে বলা হয়, কৃষিভিত্তিক প্রকল্পগুলোর ঢাকার প্রধান কার্যালয়ের ঠিকানা ঘুরে ৪২ শতাংশের কোনো খোঁজ পাওয়া যায়নি। আর ঢাকার বাইরের প্রধান কার্যালয়ের ঠিকানায় গিয়ে খোঁজ মেলেনি ১৫ দশমিক ৮ শতাংশের। নমুনা জরিপের মাধ্যমে মাঠপর্যায়ে গিয়ে দেখা গেছে, কৃষিভিত্তিক প্রকল্পের ২৫ শতাংশের কার্যালয় হয় খুঁজে পাওয়া যায়নি, না হয় সেসব অফিস সম্পূর্ণভাবে অকার্যকর বা বন্ধ। আইসিটি প্রকল্পের ক্ষেত্রে ঠিকানা পাওয়া যায়নি ৪৩ দশমিক ৮ শতাংশের। গবেষণা প্রতিবেদনে এগুলোকে ‘বিপদগ্রস্ত উদ্যোগ’ হিসেবে উলেল্গখ করেছে বিআইডিএস। আবার জরিপে সাড়া দিয়েছে এমন প্রকল্পগুলোর মধ্যে অন্তত ৪৪ শতাংশই নানা ধরনের সমস্যার কথা জানিয়েছে। এদের বেশির ভাগই লোকসানি প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে। ইইএফ সহায়তা পাওয়ার বেশ কয়েক বছর পর চালু হয়েছে কোনো কোনো ফার্ম। ইইএফ প্রকল্পের এ অবস্থার কারণ হিসেবে বিআইডিএস রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ এবং দুর্নীতিকে দায়ী করে।

আইসিবির ব্যবস্থাপনা পরিচালক ইফতিখার-উজ-জামান বলেন, অনেক প্রতিষ্ঠান চুক্তি পরিপালনে ব্যর্থ হয়েছে। কেউ কেউ চুক্তি ভঙ্গ করেছে। এ কারণে ইইএফের পক্ষ থেকে মামলা করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি কিছু প্রকল্প (মৎস্য ও ডেইরি) থেকে ইইএফের শেয়ার তৃতীয় পক্ষের কাছে বিক্রির উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। তবে বিক্রির আগে ওইসব প্রকল্পের উদ্যোক্তাদের অর্থ পরিশোধে চূড়ান্ত নোটিশ দেওয়া হবে। তিনি বলেন, ইইএফ যে অর্থ বিভিন্ন প্রকল্পে দেওয়া হয়েছে তা ঋণ নয়, মূলধন। অর্থাৎ প্রকল্পের মালিক ইইএফ। যে কারণে শেয়ারহোল্ডার হয়ে অন্য শেয়ারহোল্ডার থেকে অর্থ আদায়ে অর্থ ঋণ আদালতে যাওয়া যাচ্ছে না। গত এক বছর ধরে কীভাবে অর্থ আদায়ে আইনি প্রক্রিয়ায় যাওয়া যাবে তা নিয়ে পর্যালোচনা করেছেন ব্যারিস্টার রফিকুল হক। এখন কিছু পদ্ধতি বের হয়েছে, সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এদিকে ইইএফ থেকে আপাতত আর কোনো প্রকল্পে অর্থায়ন না করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে সমকালকে জানিয়েছেন প্রকল্পের মহাব্যবস্থাপক রেফাত হাসান। ইইএফ কর্তৃপক্ষের কাছে জমা থাকা ১৫০টি প্রকল্প (১০৩টি কৃষি ও ৪৭টি আইটি) যাচাই বাছাই করে আগামী মার্চের মধ্যে মঞ্জুরি প্রক্রিয়া শেষ করা হবে। এরপর নতুন করে বিধি-বিধান না করা পর্যন্ত আর কোনো প্রকল্পের আবেদনও নেওয়া হবে না।

এ বিষয়ে ইইএফের প্রকল্প পরিচালক ও বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক নির্মল চন্দ্র ভক্ত  বলেন, ইইএফ বন্ধ করা হবে বিষয়টি এমন নয়। বর্তমানে অনেক আবেদন জমা হয়ে আছে। এগুলোর কাজ শেষ না হওয়া পর্যন্ত আর কোনো আবেদন না নিতে আইসিবিকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। তবে পরবর্তী সময়ে কবে থেকে নতুন আবেদন নেওয়া হবে তা জানাতে পারেননি তিনি। শুরুতে ইইএফের ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে ছিল বাংলাদেশ ব্যাংক। ২০০৯ সাল থেকে আইসিবির ব্যবস্থাপনায় পরিচালিত হচ্ছে ইইএফ। তবে ইইএফ প্রকল্পের পরিচালক এখনও বাংলাদেশ ব্যাংকের একজন নির্বাহী পরিচালক।

জানা গেছে, গত ৪ জানুয়ারি হবিগঞ্জ এগ্রো প্রসেসিং ও চট্টগ্রামের কোয়ালিটি ফিসারিজ অ্যান্ড এগ্রো ফরেস্টের বিরুদ্ধে অর্থ আদায়ে ঢাকা পঞ্চম যুগ্ম জেলা জজ আদালতে মামলা করেছে ইইএফ কর্তৃপক্ষ। হবিগঞ্জ এগ্রো প্রসেসিং লিমিটেডের কাছে ইইএফের পাওনা ৪ কোটি ৩০ লাখ টাকা। কোয়ালিটি ফিশারিজ অ্যান্ড এগ্রো ফরেস্ট্রির কাছে পাওনা ১৭ কোটি টাকা। গত নভেম্বরে কক্সবাজার হ্যাচারি অ্যান্ড ফিশারিজের বিরুদ্ধে রামু থানায় জালিয়াতির মামলা হয়েছে। এ প্রতিষ্ঠানের কাছে ৪ কোটি ৬৯ লাখ টাকা পাওনা রয়েছে ইইএফের। লালমনি ফিশারিজ অ্যান্ড ফিডমিলস লিমিটেড বোর্ড সভা করত না বা বোর্ড সভার তথ্য ও আর্থিক বিবরণী দিত না আইসিবিকে। প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে মামলা করে নিজেদের পক্ষে রায় পেয়েছে আইসিবি। রায়ে ১৫ কার্যদিবসের মধ্যে বোর্ড সভা করার নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। প্রতিষ্ঠানটি ৫ কোটি ৯৭ লাখ টাকা মূলধন নেওয়ার পর আর পরিশোধ করেনি।

সূত্র জানায়, অর্থ উদ্ধারে আরও ১১ প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে শিগগিরই মামলা করা হবে। এর আগে প্রতিষ্ঠানগুলোকে আইনি নোটিশ দেওয়া হয়েছে। মামলার প্রস্তুতি চলছে যেসব প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে দি ডিকোড লিমিটেড। এ প্রতিষ্ঠানের কাছে ইইএফের পাওনা ৭ কোটি ৯১ লাখ টাকা। ২০০৩ সালে তহবিল দেওয়া হয় এই প্রতিষ্ঠানকে। মেয়াদ পূর্তির পাঁচ বছর পার হলেও প্রতিষ্ঠানটি মাত্র ১০ লাখ টাকা দিয়েছে। সরকারি প্রতিষ্ঠান-সংক্রান্ত সংসদীয় কমিটি এই প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ নিতে পরামর্শ দিয়েছে আইসিবিকে। রাজধানীর কারওয়ান বাজারের বিডিবিএল ভবনে অবস্থিত প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক সারওয়ার আলম শনিবার সমকালকে বলেন, ইইএফ থেকে অর্থ নিয়ে কানাডিয়ান টুন কান নামের একটি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যৌথভাবে চারটি ৫২ মিনিটের এনিমেটেড ফিল্ম তৈরির কাজ করা হয়। ওই কাজ করতে গিয়ে দক্ষ মানবসম্পদ তৈরিতেও অনেক ব্যয় হয়। এই চারটি ফিল্ম তৈরি করা হলেও কানাডিয়ান কোম্পানি প্রতারণা করায় তা থেকে কোনো আয় ডিকোড করতে পারেনি। বরং ডিকোডের অর্থ উৎস থেকে নেওয়া আরও প্রায় ১৫ কোটি টাকাও লোকসান হয়েছে। ফলে প্রতিষ্ঠানটিই বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়েছিল জানিয়ে তিনি বলেন, ডিকোড ইইএফের অর্থ ফেরত দেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছে। এরই মধ্যে কিছু অর্থের চেক দেওয়া হয়েছে। বাকি অর্থ আগামী ২ বা ৩ বছরের মধ্যে পরিশোধ করা হবে। এ ছাড়া ইউসুফ এগ্রো কমপেল্গক্স, ইফাডাপ অ্যাকুয়ার, ফরচুন পোলট্রি হ্যাচারি, আরকে কমোডিটিজ, জাহাঙ্গীর এগ্রো ফিশারি, রিসোর্স টেকনোলোজির বিরুদ্ধে মামলার প্রস্তুতি চলছে।

গত বছরের ১৮ আগস্ট ইইএফ ইউনিটের তৎকালীন পরিচালক ও বাংলাদেশ ব্যাংকের বর্তমান ডেপুটি গভর্নর এস এম মনিরুজ্জামান অর্থ মন্ত্রণালয়কে লেখা এক চিঠিতে ইইএফকে কার্যত বন্ধ করে দেওয়ার প্রস্তাব করেন। তিনি চিঠিতে বলেন, বর্তমান নীতিমালা অনুযায়ী সম মূলধন পদ্ধতিতে লভ্যাংশভিত্তিক আর্থিক সহায়তা দেওয়ায় উদ্যোক্তাদের মধ্যে সরকারি পাওনা ফেরতে অনীহা রয়েছে। ইইএফের উদ্দেশ্যও সফল হয়নি বলে মন্তব্য করেন তিনি ওই চিঠিতে।

এই সাইটে নিজম্ব নিউজ তৈরির পাশাপাশি বিভিন্ন নিউজ সাইট থেকে খবর সংগ্রহ করে সংশ্লিষ্ট সূত্রসহ প্রকাশ করে থাকি। তাই কোন খবর নিয়ে আপত্তি বা অভিযোগ থাকলে সংশ্লিষ্ট নিউজ সাইটের কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করার অনুরোধ রইলো।বিনা অনুমতিতে এই সাইটের সংবাদ, আলোকচিত্র অডিও ও ভিডিও ব্যবহার করা বেআইনি।