গোলাম মোস্তফা, নিজস্ব প্রতিবেদক, সময়ের সংবাদ:
দীর্ঘ ১৩ মাস সামাজিক রীতি-নীতি স্বাধীনভাবে পালন ও সব ধরনের সুবিধা থেকে বঞ্চিত থাকা তিন সংখ্যালঘু পরিবার অবশেষে সামাজিক অধিকার ফিরে পেয়েছে। শনিবার দুপুরে এক আনুষ্ঠানিক ভোজের মধ্যে দিয়ে তাদের সমাজে ফিরিয়ে নেয় স্থানীয় চেয়ারম্যান এবং ওই সমাজের লোকজন। ঘটনাটি জেলার তাড়াশ উপজেলার তালম ইউপির তারাটিয়া গ্রামের।
২৪ মে ২০১৭ বুধবার দৈনিক ইত্তেফাক পত্রিকায় “তাড়াশে সমাজচ্যুত তিন আদিবাসী পরিবারের মানবেতর জীবন-যাপন!” শিরনামে একটি সচিত্র প্রতিবেদন প্রকাশ হয়। এ ছাড়াও যুগান্তর, সমকাল, মানবজমিনসহ আরো বেশ কয়েকটি জাতীয় ও স্থানীয় সংবাদ পত্রে এবং ৭১ টিভিতে সংবাদটি প্রকাশ হয়। তাৎক্ষণিক বিষয়টি আমলে নেন সিরাজগঞ্জ জেলা প্রশাসক ও তাড়াশ উপজেলা প্রশাসন। সমাজচ্যুত পরিবারগুলোর সাথে দেখা করেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ভারপ্রাপ্ত) মুহম্মদ মনসূর উদ্দিন, থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মনজুর রহমান এবং কৃষি অফিসার কৃষিবিদ মো. সাইফুল ইসলাম। উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে গঠন করা হয় তদন্ত কমিটি।
গত বুধবার উপজেলা চেয়ারম্যান আব্দুল হকসহ সাত ইউপি চেয়ারম্যান ছুটে যান ওই তিনটি পরিবারের কাছে। দু’পক্ষের সম্মতি নিয়ে আপোষ-মিমাংসার লক্ষে আলোচনা হয়। এ সময় জেলা প্রশাসক কামরুন নাহার সিদ্দীকা এবং পুলিশ সুপার মো. মিরাজ উদ্দিন আহাম্মেদ সমাজচ্যুতদের সাথে মোবাইল ফোনে কথা বলেন।
ওই দিনের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী গতকাল শনিবার তারাটিয়া গ্রামের মানুষের জন্য দুপুরের খাবার আয়োজন করেন তালম ইউপি চেয়ারম্যান মো. আব্বাস উজ্জামান। এলাকার মানুষের সাথে খাবার খেতে জোগ দেন উপজেলা চেয়ারম্যান মো. আব্দুল হক, উপজেলা নির্বাহী অফিসার মুহাম্মদ মনসূর উদ্দিন, কৃষি অফিসার কৃষিবিদ মো. সাইফুল ইসলাম, সদর চেয়ারম্যান মো. বাবুল শেখ প্রমুখ। এ সময় তারা পূনরায় সমাজচ্যুত পরিবার তিনটির কথা শোনেন এবং সেগুলোর সমাধান দেন।
প্রসঙ্গত: ২৩ এপ্রিল ২০১৬ সালে ইউপি নির্বাচন কেন্দ্র করে তালম ইউপির আদিবাসী অধ্যূষিত তারাটিয়া গ্রামের সধু দাস, মন্টু দাস, এবং মদন দাসের তিন পরিবারকে সমাজচ্যুত করে চেয়ারম্যান মো. আব্বাস উজ্জামান। সিদ্ধান্ত হয় পরিবারগুলোর সাথে যোগাযোগ রাখলে ১০ বার জুতা পেটা আর ১০ হাজার টাকা জরিমাণা দিতে হবে। সেই ভয়ে ওই তিনটি পরিবারকে দীর্ঘ ১৩ মাস সামাজিক সকল রীতি-নীতি স্বাধীনভাবে পালন ও সব ধরনের সামাজিক সুবিধা থেকে বঞ্চিত রাখে সকলে।
এ প্রসঙ্গে উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ভারপ্রাপ্ত) মুহম্মদ মনসূর উদ্দিন জানান, জেলা প্রশাসকের নির্দেশে জন প্রতিনিধি এবং উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগের ফলে চেয়ারম্যান এবং ওই সমাজের লোকজন আনুষ্ঠানিকভাবে সমাজচ্যুতদের সামাজিক অধিকার ফিরিয়ে দিয়েছে।