গোলাম মোস্তফা, নিজস্ব প্রতিবেদক, সময়ের সংবাদ:
টাঙ্গাইলে চলন্ত বাসে গণ ধর্ষণের পর পৈশাচিকভাবে খুনের শিকার জাকিয়া সুলতানা রুপার বোনের চাকরির ব্যবস্থা করেছেন স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনামন্ত্রী মোহাম্মাদ নাসিম। শুক্রবার রুপার গ্রামের বাড়ি সিরাজগঞ্জের তাড়শ উপজেলার আসানবাড়িতে এক স্বরণ ও শোক সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে যোগদান করে তিনি এ ঘোষণা দেন। একই সঙ্গে তিনি বগুড়া এসেনশিয়াল ড্রাগস কোম্পানিতে তার যোগ্যতা অনুযায়ী চাকরি দেওয়ার জন্য কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেন। এ ছাড়াও তিনি উপস্থিত হাজারও জনতার সামনে আইনমন্ত্রী আনিছুর রহমানের সঙ্গে মোবাইল ফোনে কথা বলে রুপা ধর্ষণ ও হত্যা মামলায় গ্রেফতারকৃত অপরাধীদের দ্রুত বিচার আইনে চরম শাস্তির ব্যবস্থা করার অঙ্গিকার করেন। সমাবেশে যোগদানের পূর্বে তিনি নিহত রুপার পরিবারের খোঁজখবর নিয়ে শোকসন্তুপ্ত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জ্ঞাপন করেন। এ সময় তাড়াশ উপজেলা পরিষদের অনুদান ১০ হাজার টাকা, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের ২৫ হাজার টাকা, এমপি মিলন ব্যক্তিগত ৫০ হাজার টাকা এবং মন্ত্রী নাসিম ১ লাখ টাকার চেক নিহত রুপার মা হাছনাহেনা বানুর হাতে তুলে দেন।
স্বরণ ও শোক সভায় সভাপতিত্ব করেন জেলা প্রশাসক কামরুন নাহার সিদ্দিকা। সভার শুরুতে কোরআন থেকে তেলাওয়াত করেন তাড়াশ কেন্দ্রীয় জামে মসজিদের পেশ ঈমাম হাফেজ মো. আনিছুর রহমান। কোরআন তেলাওয়াত শেষে তিনি নিহত রুপার রুহের মাগফেরাত কামনা করে দোয়া পরিচালনা করেন। এতে হাজারও মানুষ অংশ নেন।
প্রধান অতিথির বক্তৃতায় স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মাদ নাসিম বলেন, গ্রেফতারকৃত অপরাধীদের দেশের আইনানুযায়ী এমন বিচার করা হবে, যেন এই দেশে আর কোন মেয়ের প্রাণ অকালে ঝরে না যায়। তিনি এরকম একটি জঘন্য হত্যা মামলার সঙ্গে জড়িতদের পক্ষে কোন উকিল না দাঁড়ানোর আহ্বান জানান। পাশাপাশি সাংবাদিকদের এই বিষয়ে লেখালেখি অব্যাহত রাখার কথাও বলেন।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন সিরাজগঞ্জ-৩ আসনের সংসদ সদস্য গাজী ম.ম. আমজাদ হোসেন মিলন, পুলিশ সুপার মিরাজ উদ্দীন আহাম্মেদ, তাড়াশ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মো. আব্দুল হক, জেলা পরিষদের সদস্য অধ্যাপক মোফাজ্জল হোসেন, হোসনেয়ারা পারভিন লাভলী, বারুহাস ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. মোক্তার হোসেন, জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মোহাম্মাদ হান্নান, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সঞ্জিত কর্মকার, সাংগঠনিক সম্পাদক শাহিনুর ইসলাম লাবু প্রমুখ।
প্রসঙ্গত: গত শুক্রবার বিকেলে বগুড়া থেকে ময়মনসিংহগামী নিরাপদ পরিবহনের ‘ছোয়া’ নামের (ঢাকা মেট্রো ব-১৪-৩৯৬৩) একটি বাসে ওঠেন রুপা। ময়মনসিংহে এক আত্মীয়ের বাসায় রাত কাটিয়ে পরদিন শেরপুর শহরের কর্মস্থলে যেতে চেয়েছিলেন তিনি। কিন্তু রুপা আর গন্তব্যে পৌছানো হয়নি। ওই বাসের ভেতর চালক, সুপারভাইজার এবং তিন হেলপার তাকে একে একে ধর্ষণের পর পৈশাচিক কায়দায় খুন করে জানালা দিয়ে বাইরে ছুড়ে ফেলে রক্তাক্ত লাশ। পরিচয় না মেলায় গত শনিবার ময়নাতদন্ত শেষে বেওয়ারীশ লাশ হিসেবে টাঙ্গাইল কেন্দ্রীয় কবরস্থানে দাফন করে মধুপুর থানা পুলিশ। এরপর গত সোমবার গণমাধ্যমে প্রকাশিত ছবি দেখে নিহতের বড় ভাই লাশ সনাক্ত করেন। তার দেওয়া তথ্য মতে সেই রাতেই মধুপর থানা পুলিশের হাতে গ্রেফতার হয় পাঁচ ঘাতক। আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয় তারা ‘ চলন্ত বাসে গণ ধর্ষণের পর পৈশাচিকভাবে হত্যা করা হয় মেধাবী প্রাণবন্ত রুপাকে (২৭)। সে সিরাজগঞ্জ জেলার তাড়াশ উপজেলার আসানবাড়ি গ্রামের মৃত জেলহক প্রামানিকের মেয়ে।