এ অবস্থায় নিজেদের কার্যপদ্ধতি ঠিক করতে আজ শনিবার প্রথমবারের মতো বৈঠকে বসছে সার্চ কমিটি। এ বৈঠকে নতুন প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অন্য নির্বাচন কমিশনার নিয়োগে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের কাছে নাম সুপারিশের জন্য সার্চ কমিটি কোন প্রক্রিয়ায় এগোবে, তা চূড়ান্ত করা হবে। বেলা ১১টায় সুপ্রিম কোর্টের জাজেস লাউঞ্জে অনুষ্ঠেয় বৈঠকে কমিটির আহ্বায়ক সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন সভাপতিত্ব করবেন।
সার্চ কমিটির কার্যক্রমে সাচিবিক সহায়তা প্রদানকারী মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে আজকের বৈঠক-সংক্রান্ত সব প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। গতকাল ছুটির দিনেও ব্যস্ত সময় কাটিয়েছেন মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলমসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। তবে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সচিবের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি সমকালকে জানান, সার্চ কমিটির বিষয়ে তিনি কোনো কথা বলতে পারবেন না।
সার্চ কমিটির বৈঠক ও কার্যপদ্ধতি সম্পর্কে বক্তব্য জানতে গতকাল কমিটির একাধিক সদস্যের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। বেশিরভাগ সদস্যই ফোন রিসিভ করেননি। তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক সদস্য জানান, আগামী ১০ দিন মিডিয়ার সঙ্গে কোনোরকম কথা বলবেন না তিনি। আজকের বৈঠকে কী কার্যপদ্ধতি ঠিক হতে পারে_ এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘সেটা সময়মতো জানানো হবে।’
তবে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানাচ্ছে, প্রথম বৈঠকে সার্চ কমিটির কার্যক্রম কোন প্রক্রিয়ায় এগোবে_ মূলত সেটিই ঠিক করা হবে। প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অন্য কমিশনারদের নাম প্রস্তাবের ক্ষেত্রে ২০১২ সালের সার্চ কমিটির অনুসৃত পদ্ধতি নাকি নতুন কোনো পন্থা নেওয়া হবে, তাও নির্ধারণ করা হতে পারে আজকের বৈঠকে। কমিটির কোনো কোনো সদস্য নিজস্ব উদ্যোগেও নাম সংগ্রহের চেষ্টা করছেন। আবার গতবারের মতো এবারও মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে সরকারের অবসরপ্রাপ্ত মন্ত্রিপরিষদ সচিব ও মুখ্য সচিবদের নামের এবং সুপ্রিম কোর্টের নিবন্ধকের কাছ থেকে অবসরপ্রাপ্ত জেলা বিচারকদের নামের কিংবা রাজনৈতিক দলের কাছ থেকে কোনো নামের তালিকা চাওয়া হবে কি-না, তাও ঠিক হবে আজকের বৈঠকে। কমিটির সুপারিশের তালিকা চূড়ান্ত করতে আরও কয়েকটি বৈঠক হবে।
গত বুধবার রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনকে আহ্বায়ক করে ছয় সদস্যের সার্চ কমিটি গঠন করেন। কমিটির সদস্যরা হলেন_ হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি ওবায়দুল হাসান, সরকারি কর্মকমিশন চেয়ারম্যান ড. মোহাম্মদ সাদিক, মহাহিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রক (সিএজি) মাসুদ আহমেদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের অধ্যাপক ড. সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম এবং চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. শিরীন আখতার।
মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে বেঁধে দেওয়া কার্যপরিধি অনুযায়ী, সার্চ কমিটি ১০ কর্মদিবসের মধ্যে প্রধান নির্বাচন কমিশনারসহ অন্য নির্বাচন কমিশনারের নাম সুপারিশ করবে। প্রতিটি পদের বিপরীতে একাধিক ব্যক্তির নাম সুপারিশ করা যাবে। তবে নূ্যনতম একজন নারীর নাম প্রস্তাব করতে হবে। ফলে এই প্রথমবারের মতো নির্বাচন কমিশনে একজন নারী সদস্য অন্তর্ভুক্ত হচ্ছেন। সার্চ কমিটির ছয় সদস্যের মধ্যে তিনজনের উপস্থিতিতে কোরাম গঠিত হবে। সিদ্ধান্তের সমতার ক্ষেত্রে সভায় সভাপতিত্বকারী সদস্যের নির্ণায়ক সিদ্ধান্ত প্রদানের ক্ষমতা থাকবে। সার্চ কমিটি সভার কার্যপদ্ধতি নির্ধারণ করতে পারবে।
পাল্টাপাল্টি বক্তব্য :রাজধানীর নয়াপল্টনের এক সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, সার্চ কমিটিকে নির্দলীয় কিংবা নিরপেক্ষ বিবেচনা করার কোনো অবকাশ নেই। বিএনপি সার্চ কমিটিকে প্রত?্যাখ?্যান করছে কি-না এমন এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘প্রত্যাখ?্যান করা কিংবা না করার কোনো বিষয় নেই। নির্বাচন কমিশন যখন গঠন হবে, তখন এ প্রশ্ন আসতে পারে।’
একই দিন সিরাজগঞ্জের কড্ডার মোড়ে এক পথসভায় আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘খালেদা জিয়ার বিএনপি এখন বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট পার্টি নয়, বরং ‘বাংলাদেশ নালিশ পার্টিতে’ পরিণত হয়েছে। ঘরে বসে খালেদা জিয়ার যত নালিশ আর নালিশ। কখনও সার্চ কমিটি নিয়ে নালিশ, কখনও নির্বাচন কমিশন নিয়ে, আবার কখনও সরকারের কর্মকা নিয়ে নালিশ। নালিশ আর নালিশ।’
রাজধানীর মিরপুরে ঢাকা ডেন্টাল কলেজ ক্যাম্পাসে ঢাকা মহানগর উত্তর জাতীয় শ্রমিক লীগের সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ বলেন, ‘রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সংলাপে সব রাজনৈতিক দলই ইসি গঠনে সার্চ কমিটি করার আহ্বান জানিয়েছিল। রাষ্ট্রপতি তাদের প্রস্তাব অনুসারে সার্চ কমিটি গঠন করেছেন। সার্চ কমিটিতে রাষ্ট্রপতি যাদের নিয়োগ দিয়েছেন তাদের সবাই যোগ্য ব্যক্তি। তাদের কোনো রাজনৈতিক সম্পৃক্ততা নেই।’ বিএনপিকে উদ্দেশ করে তিনি বলেন, ‘রাষ্ট্রপতির ওপর আস্থা রাখুন। তিনি সবার আস্থাপূর্ণ নির্বাচন কমিশন গঠন করবেন।’
যশোর পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের ৫০ বছর পূর্তি উদযাপন ও মিলনমেলার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে নৌ পরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খান বিএনপির উদ্দেশে বলেন, ‘ইসি গঠন নিয়ে বিএনপি অনেক কথা বলছে। রাষ্ট্রপতি ৩১ দলের সঙ্গে কথা বলেছেন। তার ভিত্তিতে তিনি নির্বাচন কমিশন করবেন। এ নিয়ে বহু বিভ্রান্তি ছড়িয়েছেন। এসব ছড়াবেন না। বিভ্রান্তি ছড়িয়ে কোনো লাভও হবে না।’
এ ছাড়া জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে স্বাধীনতা পরিষদের মানববন্ধনে আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ বলেন, ‘নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠনে রাষ্ট্রপতি দলনিরপেক্ষ ব্যক্তিদের নিয়ে সার্চ কমিটি গঠন করেছেন। যারা সাংবিধানিক পদের ও সুশীল সমাজের লোক। তাদের কেউ কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সম্পৃক্ত নন।’