গোলাম মোস্তফা, নিজস্ব প্রতিবেদক, সময়ের সংবাদ:
মৎস্য সম্পদ সংরক্ষণ ও উন্নয়নে জনগণের ব্যাপক অংশগ্রহন নিশ্চিতকরণের লক্ষ্যে জাতীয় মৎস্য সপ্তাহ ২০১৭ উপলক্ষ্যে সারা দেশের ন্যায় জেলার চলনবিল অধ্যূষিত তাড়াশেও ১৮-২৪ জুলাই পর্যন্ত নানা কর্মসূচি বাস্তবায়িত হয়েছে। তবুও থেমে নেই মা মাছ ও পোনা নিধনযজ্ঞ। মৎস্য শিকারীরা বেপরোয়াভাবে মা মাছ ও পোনা মাছ ধরে চলনবিলকে মাছশূন্য করার অপচেষ্টায় মেতে উঠেছে। হাটে-বাজারে প্রকাশ্যে সব ধরনের নিশিদ্ধ জাল দেদারছে বিক্রি করা হচ্ছে। আর উপজেলা প্রশাসন বিরব ভূমিকা পালন করছেন।
চলনবিল দেশের মিঠা পানির সবচেয়ে বড় জলাভূমি। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, যমুনা নদীর বাঘাবাড়ির হুরাসাগর হয়ে বড়াল ও গুমানি নদী পথে চলনবিলে বিভিন্ন প্রজাতির দেশীয় মা মাছ প্রবেশ করে প্রজনন শুরু করেছে। মা মাছের মধ্যে রয়েছে বোয়াল, টেংরা, পুঁটি, পাঁতাসি, রায়েক, চেলা, মোয়া, চাটা খইলসা, বাড়ি খইলসা, নন্দই, বাইলা, আইড়, গুজা, কাতলা, রুই, জিয়াল, মাগুড়সহ হরেক মাছ। এসব মাছ বিলের মুক্ত জলাশয় ও খাল-নালায় ডিম ছাড়ছে। শ্রাবণ মাস পর্যন্ত নিধনকারীদের হাত থেকে রক্ষা পেলে দ্রুত বেড়ে উঠে চলনবিলের পানি মাছে ভরে উঠবে।
তবে তা সম্ভব হচ্ছে না। চলনবিলের তাড়াশ অংশের মৎস্য শিকারীরা নিষিদ্ধ বাদাই ও কারেন্ট জাল দিয়ে জলাভূমি থেকে পোনা মাছ ছেকে তুলছে। এ ছাড়াও খাল-নালার বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানে বানা সেট করে খরা জাল পেতে এবং ছোট-ছোট সুঁতিজাল দিয়ে মা মাছ ও পোনা মাছ বাণিজ্যিকভাবে শিকার করছে। সরকারিভাবে মা মাছ নিধন নিষেধ থাকলেও প্রশাসনের নাকের ডগায় প্রতিদিন ডিমে পেটভরপুর মাছগুলো তাড়াশের বৃহত্তর মহিষলুটি মৎস্য আড়ত ও আশপাশের স্থানীয়ভাবে গড়ে উঠা হাটে-বাজারে বিক্রি করা হচ্ছে। একই সাথে হাট-বাজারগুলোতে প্রকাশ্যে সব ধরনের নিশিদ্ধ জাল দেদারছে বিক্রি চলছে। প্রতি বৃহস্পতিবার শুধু নওগাঁ হাটেই প্রায় লাখ টাকার কারেন্ট জাল বিক্রি হয়ে থাকে।
এদিকে নাটোর জেলার গুরুদাসপুর, বড়াইগ্রাম, সিংড়া এবং পাবনা জেলার চাটমোহর উপজেলায় চলনবিলের নতুন পানিতে মা মাছ ও পোনা মাছ রক্ষায় প্রশাসনিক তৎপরতা জোরদার করা হয়েছে। ফলে তুলনামূলক অরক্ষিত চলনবিলের তাড়াশ অংশে ওই সব এলাকার মৎস্য শিকারীরা রাতভর মা মাছ ও পোনা মাছ বানিজ্যিকভাবে শিকার করছে।
উপজেলা মৎস্য অফিসার মো. হাফিজুর রহমান বলেন, একটা বৃহত আয়তন নিয়ে সমগ্র চলনবিল। মিঠা পানির জলাভূমি হওয়ায় এখানে বর্ষা মৌসুমে প্রাকৃতিকভাবে প্রচুর মাছের সমারহ ঘটে। এ অঞ্চলের জেলেরা খুবই গরীব। অনেকটা নিরুপায় হয়ে তারা মৎস আইন অমান্য করে মাছ শিকার করে থাকে। এরপরও মৎস্য বিভাগ থেকে মা মাছ ও পোনা নিধন বন্ধে সব রকমের চেষ্টা চলছে। নিশিদ্ধ কারেন্ট জাল বিক্রির বিরুদ্ধে হাট-বাজারগুলোতে নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে।
এ প্রসঙ্গে অতিরিক্ত দায়িত্বে থাকা উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও সহকারী কমিশনার (ভূমি) মুহম্মদ মনসূর উদ্দিন বলেন, চলনবিলের মাছে সারা দেশের অনেকখানি চাহিদা মেটে। এই মৎস্য সম্পদ রক্ষায় সংশ্লিষ্ট বিভাগকে সতর্ক থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। মা মাছ ও পোনা মাছ নিধন এবং অবৈধ কারেন্ট জাল বিক্রির বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে।