দেশের উত্তরাঞ্চলের দরিদ্র জনগণের জন্য বিশুদ্ধ খাবার পানি ও কৃষি কাজে সেচের পানি সরবরাহের উদ্দেশে ১৯৮১ সালে রংপুর ফাউন্ড্রি লিমিটেডের (আরএফএল) যাত্রা শুরু। পরে কৃষিপণ্য উৎপাদন ও প্রক্রিয়াজাতকরণের মাধ্যমে প্রসার ঘটে প্রাণের।
এর মধ্যে প্রক্রিয়াজাত খাদ্যপণ্য, প্লাস্টিকের গৃহস্থালিসামগ্রী, কাস্ট আয়রন, পিভিসি, লিফট, ফার্নিচার, ইলেকট্রনিক্স, বাইসাইকেল, টেক্সটাইল, পেইন্ট ও ফ্লেক্সিবল প্যাকেজিংসামগ্রী উৎপাদন ও বিপণন করছে। শ্রেণি অনুসারে এখন প্রাণ পণ্য প্রায় ৮০০ ও আরএফএলের পণ্য প্রায় ৮০০টি।
প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের বিপণন পরিচালক কামরুজ্জামান কামাল সমকালকে বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের দ্রুত প্রসার হচ্ছে। ক্রেতাদের চাহিদা অনুযায়ী নতুন অনেক পণ্য বাজারে আনা হয়েছে। বিদ্যমান পণ্যের বৈচিত্র্য আনা হচ্ছে। পণ্য রফতানি ও বাজার বাড়ছে।
তিন বছর আগে ভিশন ব্র্যান্ডের ইলেকট্রনিক্স পণ্য বাজারে আনে আরএফএল। শুরুর দিকে সংযোজন করলেও এখন দেশে উৎপাদন হচ্ছে। আগামী মার্চে দেশে তৈরি ভিশন ব্র্যান্ডের টিভি, রেফ্রিজারেটর, এয়ারকন্ডিশনসহ বিভিন্ন পণ্য বিক্রি শুরু হবে। গত জানুয়ারি মাসে নতুন পণ্য রেইনবো পেইন্টস বাজারে এনেছে আরএফএল। গত বছর থেকে ‘রঙ’ উৎপাদন হচ্ছে। দীর্ঘদিন থেকে পিভিসি পাইপ তৈরি করছে আরএফএল। ফ্যালকন ব্র্যান্ডের নতুন জিআই পাইপ শিগগিরই বাজারে ছাড়বে কোম্পানিটি। আরএফএল টায়ার-টিউবসহ দুরন্ত ব্র্যান্ডের বাইসাইকেল উৎপাদনে গেছে। হবিগঞ্জে গত বছর একটি সাইকেল কারখানা স্থাপন করেছে। বর্তমানে এ বাইসাইকেল রফতানি হচ্ছে। কাঠ, স্টিল ও লেমেনেটেড বোর্ড দিয়ে তৈরি করে রিগ্যাল ব্র্যান্ডের ফার্নিচার বাজারজাত করছে প্রাণ-আরএফএল। গত বছর থেকে দেশে কপার উৎপাদনের মাধ্যমে আবাসিক ও শিল্পের জন্য ব্যবহৃত বিজলি ব্র্যান্ডের কেবল বাজারে এসেছে।
গত বছর গেটওয়েল ব্র্যান্ডের মেডিকেল সরঞ্জাম তৈরি শুরু হয়েছে। ইতিমধ্যে তা বাজারজাত করা হচ্ছে। এ ছাড়া ফোটন ব্র্যান্ডের গাড়ি ও সাউদিয়া ব্র্যান্ডের লুব্রিকেন্ট আমদানি করে বাজারজাত করা হচ্ছে। দেশের বাজার যাচাই করে এসব পণ্য উৎপাদনে যাওয়ার পরিকল্পনা করছে কোম্পানিটি।
সম্প্রতি জীবন্ত মাছ বাজারজাত করছে প্রাণ। সিলেট, শ্রীমঙ্গল ও হবিগঞ্জে এসব মাছ চাষ করে সরাসরি রাজধানীর বাজারে বিক্রি করা হচ্ছে। কোম্পানিটি ২০১৬ সালে ঢাকায় ‘তাজা ফিশ’ নামে ৫টি আউট লেট চালু করেছে। পর্যায়ক্রমে রাজধানীর সব এলাকায় আউটলেট করার পরিকল্পনা রয়েছে।
গত বছরের সেপ্টেম্বরে মিঠাই ব্র্যান্ডের মিষ্টি বাজারে নিয়ে এসেছে প্রাণ। রাজধানীতে সীমাবদ্ধ থাকলেও পর্যায়ক্রমে সারাদেশে মিঠাইয়ের আউটলেট হবে। এ ছাড়া ফাস্টফুডের চেইন স্টোর ‘টেস্টি ট্রিট’ চালু করেছে প্রাণ। ইতিমধ্যে কোম্পানিটি ১৫টির বেশি চেইন স্টোর করেছে।
২০১৫ সাল থেকে সব ধরনের নিত্যপ্রয়োজনীয় গৃহস্থালি পণ্য সরবরাহ করতে চেইন শপ ‘ডেইলি শপ’ চালু করে প্রাণ। ইতিমধ্যে এর ৫০টি শাখা চালু হয়েছে। খাদ্যপণ্যের মধ্যে জুস, স্ন্যাকস, কনফেকশনারি ও ডেইরি পণ্যের মধ্যে অনেক নতুন পণ্য যুক্ত করেছে প্রাণ। গত বছর থেকে হিমায়িত খাদ্য উৎপাদন শুরু করে এখন বাজারজাত করা হচ্ছে। এ ছাড়া গার্মেন্ট পণ্য উৎপাদনে বৈচিত্র্য এনেছে প্রাণ। দেশে বিক্রির পাশাপাশি তা রফতানি করছে।
পাঁচ বছর আগে এ গ্রুপের ২৫টি প্রতিষ্ঠান ছিল। এখন ৫০টির বেশি প্রতিষ্ঠান রয়েছে। খাদ্য ও পল্গাস্টিকের দুটি খাতে সর্বাধিক বহুমুখী পণ্য উৎপাদন করে এ গ্রুপ। দেশের বিভিন্ন স্থানে ১৫টি আধুনিক কারখানায় এসব পণ্য উৎপাদিত হয়। বর্তমানে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন প্রায় ৮৪ হাজার কর্মকর্তা ও কর্মচারী। যার মধ্যে ২৫ হাজার নারী। ২০১০ সালে এই গ্রুপে মাত্র ২০ হাজার জনবল ছিল। এ ছাড়া কৃষিপণ্য উৎপাদনে গ্রুপের হয়ে কাজ করেন এক লাখেরও বেশি চুক্তিভিত্তিক কৃষক। পরোক্ষভাবে বিভিন্ন কাজের সঙ্গে জড়িত আরও প্রায় ২
লাখ জনবল। এভাবে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে
প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের ওপর নির্ভরশীল প্রায় ১৫ লাখ মানুষ।
রফতানিতে অবদান রাখায় প্রাণ পর পর ১৩ বছর জাতীয় রফতানি ট্রফি অর্জন করেছে। এ ছাড়া পণ্যের গুণগতমান বজায় রাখায় বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সনদ লাভ করেছে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপ। বর্তমানে বিশ্বের ১৩৪টি দেশে প্রাণ পণ্য রফতানি হচ্ছে। পাঁচ বছর আগে ৮৮টি দেশে রফতানি হতো। রফতানি পণ্যের তালিকায় রয়েছে- বিভিন্ন ফ্রুট ড্রিংক, বেভারেজ, স্ন্যাকস, বিস্কুট, পটেটো ক্র্যাকার, চানাচুর, ঝালমুড়ি, ক্যান্ডি, বাবল গাম, ললিপপ, সস, জেলি, মসলা, সুগন্ধি চাল ইত্যাদি।