গোলাম মোস্তফা, নিজস্ব প্রতিবেদক, সময়ের সংবাদ:
সিরাজগঞ্জের তাড়াশ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স মোড় থেকে আধুনিক ডাকবাংলো পর্যন্ত দের কিলোমিটার সদরের প্রধান সড়কের কার্পেট উঠে বেহাল দশার কারণে যোগাযোগ ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে। মাঝে মধ্যে দেখে বোঝার উপায় নেই পাকা সড়ক। সড়ক জুড়ে সৃষ্টি হয়েছে ছোট-বড় অসংখ্য গর্ত। কোথাও কোথাও দশ-পনের ফিট লম্বা গর্তের গভীরতা হাঁটু সমান। সামান্য বৃষ্টিতে এসব গর্তে দিনের পর দিন পানি জমে থাকছে। আর পানি শুকালে কাঁদার ভাগাড়ে পরিণত হচ্ছে। দুর্ঘটনার ভয়ে কোন ভারী যানবাহন সড়কটি দিয়ে সদরে প্রবেশ করতে পারছে না। হালকা যানবাহন ঝুঁকি নিয়ে তাড়াশ সদরের তাড়াশ গ্রামের একটি পাড়ার মধ্যে দিয়ে বিকল্প সড়ক হিসেবে চলাচল করছে।
সদরের এই প্রধান সড়কের সঙ্গেই সিরাজগঞ্জ-৩ আসনের সংসদ সদস্যর বাসভবন, উপজেলা চেয়ারম্যানের বাসভবন, উপজেলা পরিষদ, সদর ইউনিয়ন পরিষদ এবং তাড়াশ থানা। সড়কের দু’পাশে রয়েছে প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ের স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা। রয়েছে সরকারি বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান। এ ছাড়াও সদরের এই প্রধান সড়কে ঘিরে গড়ে উঠেছে অসংখ্য ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও বাসাবাড়ি।
উপজেলা সদরে যোগাযোগ ব্যবস্থার একমাত্র মাধ্যম হিসেবে ব্যবহৃত তাড়াশ সদরের সড়কটি দিয়ে দিন-রাত ২৪ ঘন্টাই হালকা ও ভারি ধরনের বহু যান্ত্রিকযানবাহনসমূহ চলাচল করে থাকে। দৈনন্দিন প্রয়োজনে বিভিন্ন এলাকার হাজার-হাজার মানুষ সদরে প্রবেশ করেন। বহিরাগত এবং স্থানীয়রা মিলে প্রতিদিন সকাল থেকে রাত পর্যন্ত কমপক্ষে পনের হাজার মানুষ এই বেহাল সড়ক দিয়ে পায়ে হেঁটে যাতায়াত করেন।
সরেজমিনে দেখা গেছে, তাড়াশ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স মোড় থেকে আধুনিক ডাকবাংলো পর্যন্ত দের কিলোমিটার সদরের প্রধান সড়কের পুরোটার পাকা কার্পেট উঠে খানাখন্দ আর ছোট-বড় অসংখ্য গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। উপজেলা পরিষদের সামনে, মোহরী অফিস মোড়, তাড়াশ মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও তাড়াশ ইসলামিয়া পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের সামনে, পোষ্ট অফিস মোড়, সদর ইউনিয়ন পরিষদের সামনে, তাড়াশ থানা গেটের সামনে এবং তাড়াশ আধুনিক ডাকবাংলোর সামনে কোথাও কোথাও দশ-পনের ফিট লম্বা গর্তের গভীরতা হাঁটু সমান। সড়কটি দিয়ে স্বাভাবিক যানবাহন চলাচল দুরের কথা, পায়ে হেঁটে চলাও দুষ্কর হয়ে পড়েছে। সব ধরনের যানবাহন চলাচল করছে ধীর গতিতে। থেমে-থেমে সৃষ্টি হচ্ছে যানজটের। যে কোনো সময় ঘটে যেতে পারে বড় ধরনের দুর্ঘটনা।
সব চেয়ে মুশকিলে পড়েছেন স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসাগামী শিক্ষার্থীরা। আর নাভিস্বাশ উঠছে বয়োবৃদ্ধ আর গুরুতর অসুস্থদের। বেহাল সড়ক দিয়ে ঠিকঠাক না চলে যে কোন ধরনের গাড়ি, না যায় পায়ে হাঁটা। তারপরও বাধ্য হয়ে খানাখন্দে ভরা কাঁদা-পানির ঝুঁকিপূর্ণ সড়ক দিয়ে সকাল-সন্ধা যাতায়াত করছেন তারা।
এদিকে ব্যবসায়ীদের মালামাল বোঝাই গাড়ি বাজারে প্রবেশ না করতে পারায় দুরে কোথাও রেখে লোড-আনলোডের কাজ করতে হচ্ছে। এতে তাদের খরচ অনেকটা বেড়ে যাচ্ছে। ফলে দেশের অন্যান্য বাজারের তুলনায় তাড়াশ বাজারে সব ধরনের পণ্যের দাম কিছুটা বেশি মূল্যে বিক্রি হচ্ছে। যার মাশুল দিতে হচ্ছে ক্রেতা-সাধারণকে।
ভুক্তভোগীদের একজন তাড়াশ থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মনজুর রহমান জানান, থানার গেটের দু’পাশেই খানাখন্দ আর ছোট-বড় অসংখ্য গর্তে ভরা। এসব স্থানে কখনও পানি আবার কখনওবা কর্দমাক্ত হয়ে থাকছে। চাইলেও আইনশৃঙ্খলা রক্ষা কাজে গাড়ি নিয়ে সময় মতো বেড় হওয়া যায় না।
সদর চেয়ারম্যান মো. বাবুল শেখ সড়কটি মেরামতের জোর দাবি জানিয়ে বলেন, তিনি নিজ উদ্যোগে ইউনিয়ন পরিষদের সামনের বেশ কয়েকটি গর্তে ইট-সুরকী ফেলেছেন। তবে প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল।
এ প্রসঙ্গে জেলা সড়ক ও জনপদ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী আবুহেনা মোস্তফা কামাল জানান, তাড়াশে বেশ কয়েকটি সড়ক মেরামত করা জরুরী হয়ে পড়েছে। বর্ষা মৌসুম শেষ হলেই সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়ে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স মোড় থেকে আধুনিক ডাকবাংলো পর্যন্ত দের কিলোমিটার সদরের প্রধান সড়ক মেরামত করা হবে।