গোলাম মোস্তফা, নিজস্ব প্রতিবেদক, সময়ের সংবাদ:
তাড়াশ সোনালী ব্যাংক থেকে টাকা তুলতে এসে চরম ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন বয়স্ক, বিধবা এবং প্রতিবন্ধী ভাতাভোগী। বয়োবৃদ্ধ ও প্রতিবন্ধী এসব মানুষকে সকাল থেকে রাত অবদি অপেক্ষা করতে হচ্ছে টাকা নিতে এসে। দীর্ঘ সময় লাইনে দাঁড়িয়ে থেকে অসুস্থ হয়ে পড়ছেন অনেকে। প্রায়শই ঘটছে সড়ক দুর্ঘটনা। উপজেলার আট ইউনিয়নের মধ্যে সোনালী ব্যাংক থেকে প্রতি তিন মাস অন্তর তাড়াশ সদর এবং তালম ইউনিয়নের ভাতা দেওয়া হয়। এ দুইটি ইউনিয়ন থেকে সব মিলিয়ে ভাতাভোগীর সংখ্যা ১৯৩০ জন।
প্রতিবার ভাতা দেওয়ার সময় দেখা যায়, ভাতাভোগীর উপচেপড়া ভিড়। সাতসকালে বাড়ি থেকে এসে দিনভর প্রখর রোদ আর প্রচন্ড গরমে সবার নাভিশ্বাস অবস্থা। ভাতার অপেক্ষায় ব্যাংকের নিচতলা, সামনের প্রধান সড়ক আর আশপাশের দোকান ঘেষে দাঁড়িয়ে ও মাটিতে গাদাগাদি বসে আছে অসংখ্য বৃদ্ধ নারী-পুরুষ। দীর্ঘ অপেক্ষা করে অনেকেই ক্লান্ত হয়ে ঝিমুনি দিচ্ছেন যত্রতত্র। কেউবা পাশের নির্মানাধীন উপজেলা পরিষদ হলরুমের ময়লা আবর্জনার মধ্যে অসুস্থ হয়ে শুয়ে আছেন। কারো কারো ভাতা পেতে সকাল থেকে রাত অবদি লেগে যাচ্ছে। ভাতাভোগীদের জন্য না আছে বসার জায়গা, না আছে প্রসাব-পায়খানার ব্যবস্থা। জরুরত সারতে সবাই ছুটে যাচ্ছেন দূরের উপজেলা মসজিদের পায়খানায়। সেখানেও অপেক্ষায় ছটফট করতে হচ্ছে কখন একজন পায়খানা থেকে বের হবেন সেই আশায়। ভাতা তুলতে আসা বয়োবৃদ্ধ এবং প্রতিবন্ধিদের অবর্ণনীয় কষ্ট দেখে সর্বস্তরের লোকজন আপসোস করতে থাকেন!
তাড়াশ ইউনিয়নের ভাতাভোগীদের ব্যাংকটি তুলনামূলক কাছে হলেও তালম ইউনিয়নের ভাতাভোগীদের প্রায় ১২ কিলোমিটার দূরে। এঁদের অনেকে চোখে কম দেখেন, হাঁটতে পারেন না। আবার কেউ গুরুতর অসুস্থ। দুইটি ইউনিয়ন থেকেই অসুস্থ এবং প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের নিজ নিজ এলাকার ভ্যান নিয়ে আসতে হয়। এসব রিজার্ভ গাড়ির ভাড়াও নিছক কম নয়। প্রতি তিন মাস অন্তর বয়স্ক ভাতা এক হাজার পাঁচশ, বিধবা ভাতা এক হাজার পাঁচশ এবং প্রতিবন্ধী ভাতা হিসেবে এক হাজার আটশ টাকা পেয়ে থাকেন। এর দুই থেকে আড়াইশ টাকা গাড়ি ভাড়া দিতে হচ্ছে।
পূর্ব তাড়াশের একমাত্র প্রবেশদ্বার তাড়াশ বাজারের প্রধান সড়কের সাথে সোনালী ব্যাংক অবস্থিত। এখানে ভাতা তুলতে এসে প্রতিবারই কেউ না কেউ সড়ক দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছেন। গত মে মাসের ২৩ তারিখে বয়স্ক ভাতা তুলতে এসে তালম উইনিয়নের জন্তিপুর গ্রামের আলোকী নামে এক বৃদ্ধা মাতা সড়ক দুর্ঘটনায় হাসপাতালে ভর্তি হন।
ওই তারিখে টাকা নিতে আসা জরিনা বেগম, আমেনা খাতুন, বাহারন নেছা, মর্জিনা বেগম, তমেজ আলী, নুরুল ইসলাম, আব্দুল হালিম, সৈয়দ আলীসহ অনেকের সাথে আলাপ করে জানা গেল, এর আগে বয়স্ক, বিধবা এবং প্রতিবন্ধী ভাতা আলাদা দিনে দিত। তখন খুব একটা সমস্যা হত না। এখন একই সাথে দেওয়ায় সীমাহীন কষ্ট হচ্ছে তাঁদের। অসুস্থ ও প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের না দেখে টাকা দেয়না ব্যাংক কর্তৃপক্ষ। যে কারণে টেনে হেঁচরে দোতলায় নিতে হয়।
তাঁরা আরো বলেন, ব্যাংক থেকে মাঝে মধ্যেই অনেকের ভাতা উত্তোলন বহি হারিয়ে যায়। আর এসবের সুযোগ নেন স্থানীয় ইউপি সদস্য। তালম ইউনিয়নের হারিসোনা গ্রামের জহুরা বেগম বলেন, তাঁর এবং ওই গ্রামের ওমিছা ও ছমিরনের বহি কোন এক সময় হারিয়ে যায়। সংশ্লিষ্ট ইউপি সদস্য আব্দুল আজিজের সহায়তায় বহি দুইটি পাওয়া গেলেও তাঁদের প্রত্যেককে এক হাজার পাঁচশ টাকার স্থলে শুধু মাত্র এক হাজার টাকা দেওয়া হয়।
সোনালী ব্যাংক তাড়াশ শাখার প্রধান ব্যবস্থাপক মল্লিক মো. জুলফিকার আজাদ বলেন, প্রতিবার দুই/তিনটি ওয়ার্ডের ভাতাভোগীদের খবর দেওয়া হয়। এর সংখ্যা দাঁড়ায় দুইশর মতো। কিন্তু তাঁরা না বুঝে সবাই চলে আসেন। যে কারণে দীর্ঘ সময় লেগে যায়। তিনি এও বলেন, গুরুতর অসুস্থ এবং প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে স্ব স্ব ইউপির প্যাডে চেয়ারম্যানের লিখিত নিয়ে এলে তাদের অভিভাবকের কাছে ভাতা দেওয়া হবে। ব্যাংকটির আশপাশে ফাকা জায়গা না থাকায় ভাতাভোগীদের কষ্ট বেশি হয়। ইতোমধ্যে ভাতা প্রদানের ক্ষেত্রে জনবল একজনের কাছে আরো তিনজন বৃদ্ধি করা হয়েছে।
সমাজসেবা অফিসার মো. শাহাদত হোসেন বলেন, এই প্রথম জানলাম। এক/দুই দিনের মধ্যেই সংশ্লিষ্টদের চিঠি দেওয়া হবে। যেন ভাতাভোগীদের ভোগান্তির বিষয়গুলো সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়ে ভেবে দেখা হয়।
এ প্রসঙ্গে অতিরিক্ত দায়িত্বে থাকা উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও সহকারী কমিশনার (ভূমি) মুহম্মদ মনসূর উদ্দিন বলেন, সমাজসেবা অফিসকে ব্যাংকের সাথে আলোচনা করার জন্য শিগগিরই নির্দেশনা দেওয়া হবে। ভাতা প্রাপ্তির ক্ষেত্রে যেন ভোগান্তি না হয়।