ঢাকাবুধবার , ১ ফেব্রুয়ারি ২০১৭
  • অন্যান্য
  1. অন্যান্য
  2. অপরাধ-আদালত
  3. অর্থনীতি
  4. আন্তর্জাতিক
  5. আমাদের পরিবার
  6. আলোচনার শীর্ষে
  7. কবিতা
  8. খেলাধুলা
  9. জাতীয়
  10. তথ্যপ্রযুক্তি
  11. দোয়া প্রার্থনা
  12. নারী ও শিশু
  13. বিনোদন
  14. ভিডিও
  15. মতামত বিশ্লেষণ
আজকের সর্বশেষ সবখবর

চলুন জেনে নেই সিরাজগঞ্জ জেলার পর্যটন অঞ্চল ও দর্শনীয় স্থান সমূহ

সময়ের সংবাদ
ফেব্রুয়ারি ১, ২০১৭ ৭:২২ পূর্বাহ্ণ
Link Copied!

সময়ের সংবাদ:     প্রাকৃতিক শোভায় সুশোভিত সিরাজগঞ্জ জেলায় রয়েছে বহু দৃষ্টিনন্দন স্থান। এসব স্থান সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত কিছু বর্ণনা উপস্থাপন করা হল-

বাঘাবাড়ি নদী বন্দর

 

সরকার নির্ধারিত দায়িত্বের অংশ হিসেবে অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন খাতের উন্নয়ন তত্ত্বাবধানের ধারায় বিআইডাব্লিউটিএ অভ্যন্তরীণ নৌবন্দরসমূহের উন্নয়নের প্রকল্প হাতে নেয়। প্রাথমিক পর্যায়ে ঢাকা, নারায়নগঞ্জ, চাঁদপুর, বরিশাল এবং খুলনায় পাঁচটি প্রধান অভ্যন্তরীণ বন্দর প্রতিষ্ঠিত হয়। সরকার ১৯৬০ সালের ৯ সেপ্টেম্বর তারিখের ৪৬২-এইচটিডি নং গেজেট নোটিফিকেশন দ্বারা ১৯০৮ সালের বন্দর আইনের প্রবিধানসমূহ এই পাঁচটি অভ্যন্তরীণ নৌবন্দরের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য বলে ঘোষণা করেন। পরবর্তী সময়ে আইডব্লিউটি খাতের ক্রমবর্ধমান চাহিদা পূরণে ছয়টি নতুন অভ্যন্তুরীণ নদীবন্দর প্রতিষ্ঠা করা হয় পটুয়াখালী (১৯৭৫), নগরবাড়ি (১৯৮৩), আরিচা (১৯৮৩), দৌলতদিয়া (১৯৮৩), বাঘাবাড়ি (১৯৮৩) এবং নরসিংদী (১৯৮৩)। সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর উপজেলায় বড়াল নদীর তীরে স্থাপিত হয়েছে বাঘাবাড়ি নদী বন্দর। বাঘাবাড়ি নদী বন্দরের পেট্রোলিয়াম ডিপো থেকে পেট্রোলিয়াম জাতীয় দ্রব্য এবং সার সরবরাহের মধ্য দিয়ে কোটি কোটি টাকার লেনদেন হয়। এই বন্দরটি সিরাজগঞ্জের অর্থনীতিতে বিরাট ভূমিকা রাখছে।

হার্ড পয়েন্ট

সিরাজগঞ্জ জেলা যমুনা নদীর তীরে অবস্থিত। প্রতি বছর যমুনার অব্যহত ভাঙ্গনের ফলে শহরটি ধীরে ধীরে পশ্চিম দিকে স্থানান্তরিত হয়। প্রতি বছরের ভাঙ্গনের ফলে সরকার ১৯৯৬ সালে ৪৫০ কোটি টাকা ব্যয়ে ৩ কিলোমিটার শহর রক্ষা বাধ নির্মাণ করেন। ফলে বর্তমানে শহর যমুনা নদীর ভাঙ্গনের হাত থেকে অনেকটা নিরাপদ হয়েছে। সেই সাথে অভাবিত ভাবে এই হার্ডপয়েন্টটি একটি পর্যটনের স্থান হিসেবে যথেষ্ট ভূমিকা রাখছে। প্রতি দিন দূর-দূরান্ত থেকে বহু ভ্রমণ পিপাসু মানুষ এই স্থানটি ভ্রমণ করে থাকেন। বর্ষা মৌসুমে এই স্থানটি খুবই আকর্ষণীয় হয়ে ওঠে। এখানে দাঁড়ালে যমুনা নদীর পূর্ণরূপ পর্যবেক্ষণ করা যায়। 

ছয় আনি পাড়া দুই গম্বুজ মসজিদ


শাহজাদপুরের ছয় আনি পাড়ায় রয়েছে পঞ্চদশ শতাব্দীতে নির্মিত দুই গম্বুজ বিশিষ্ট একটি মসজিদ। ‘স্থাপত্য শিল্পের দিক থেকে এর রয়েছে ভিন্ন মাত্রিক গৌরব। কারণ পঞ্চদশ শতাব্দীতে দুই গম্বুজওয়ালা মসজিদ বাংলার আর কোথাও নির্মিত হয়েছে বলে জানা যায় না’’ (শাহজাদপুরের ইতিহাস—- প্রাগুক্ত)। তাই এই মসজিদটির সংস্কার, রক্ষণাবেক্ষণ ও উন্নয়নের জন্য সরকারের নজর দেয়া প্রয়োজন বলে এলাকাবাসীর দাবি। 

নবরত্ন মন্দির

 

উল্লাপাড়া উপজেলাধীন হাটিকুমরুল ইউনিয়নের নবরত্নপাড়া গ্রামে নবরত্ন মন্দির নামে একটি পুরার্কীতি আছে। এর আশপাশে আরো কয়েকটি ছোট ছোট মন্দির রয়েছে। এ মন্দিরগুলো আনুমানিক ১৭০৪-১৭২০ সালের মধ্যে নবাব মুর্শিদকুলিখানের শাসনামলে তার জনৈক নায়েব দেওয়ান রামনাথ ভাদুরী নামক ব্যক্তি স্থাপন করেন। মূল মন্দিরটি তিনতলা বিশিষ্ট এবং অন্যান্য মন্দিরসমূহ দোচালা এবং মঠাকৃতি আটকোনা বিশিষ্ট। এমন্দির নির্মাণকালে প্রতিটি ইটঘিয়ে ভেজে তৈরী করা হয়েছিল মর্মে জনশ্রুতি রয়েছে। নবরত্ন মন্দিরটি ১৯৮৭ সালে সংরক্ষিত ইমারত হিসেবে সরকারের প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ গ্রহণকরে কিছু সংস্কার সাধনকরে। এছাড়াও সম্প্রতি ঐস্থানের মন্দির সমূহের সংস্কার সাধনকরা হয়েছে। আলোচ্য নবরত্ন মন্দিরও আশপাশের অন্যান্য মন্দিরের প্রকৃত অবয়ব অনেকাংশে ধবংসপ্রাপ্ত হলেও এর গঠন আকৃতি ও নির্মাণ শৈলী অভূতপূর্ব।

 

জয়সাগর দিঘী

 


সিরাজগঞ্জ জেলার রায়গঞ্জ উপজেলাধীন সোনাখাড়া ইউনিয়নের নিমগাছি বাজার হতে প্রায় ১ কিঃ মিঃ পশ্চিমে এ বিশাল ও প্রখ্যাত দিঘীটির অবস্থান। ঢাকা- বগুড়া মহাসড়কের ভূইয়াগাঁতী নামক স্থান হতে তাড়াশ অভিমুখী রাস্তার পাশে অবস্থিত। এ দিঘী সংলগ্ন উদয় দিঘী/কাতলা দিঘীসহ আরও কয়েকটি দিঘী রয়েছে। জয়সাগর দিঘীর বিশাল জলাধার ছাড়াও পর্যটকদের জন্য প্রয়োজনীয় অবকাঠামো গড়ে তোলার নিমিত্ত পর্যাপ্ত জায়গা রয়েছে। জনশ্রুতি আছে বিরাট রাজার আমলে প্রজাদের জলকষ্ট নিবারণ ও রাজার নিজস্ব লক্ষাধিক গবাদি পশুর পানীয় জলের

জন্য এই দিঘীগুলো খনন করা হয়। ঐতিহাসিকগণের মতে পাল সাম্রাজ্যের রাজা ২য় গোপালের শাসনামলে (৯৪০-৯৬০ খ্রিঃ) জয়সাগর দিঘী খনন করা হয় (ডঃ রমেশ চন্দ্র মজুমদার ইতিহাস ১ম খন্ড পৃঃ ৫৭)। বর্তমানে এ দিঘীসহ অনেকগুলো দিঘী নিয়ে জয়সাগর মৎস্য খামার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। গ্রামীণ ব্যাংকের নিকট ২৫ বৎসর মেয়াদে এ দিঘীগুলো ইজারা বন্দোবস্ত দেয়া আছে। ইজারার মেয়াদ প্রায় শেষ পর্যায়ে।

 

শাহজাদপুর মসজিদ

 

সিরাজগঞ্জ জেলার অন্তর্গত শাহজাদপুর সদরের একেবারে শেষপ্রান্তস্থিত দরগাপাড়ায় হুড়াসাগর নদীর পারে অবস্থিত। বিশ্বাস করা হয় যে, ১৫ শতকে প্রখ্যাত সুফিসাধক মখদুম শাহ এ মসজিদ নির্মাণ করেন। কোন লিপি প্রমাণে এ তারিখ নির্নয় করা হয়নি। মসজিদের স্থাপত্যরীতি ও অলংকরণ শৈলী হিসেবে মসজিদটি ১৫ শতকে নির্মিত হয়েছিল। বহুগম্বুজ বিশিষ্ট আয়তাকার মসজিদের গোত্রভূক্ত। শাহজাদপুর মসজিদ তিন সারিতে পাঁচটি করে মোট পনেরটি গম্বুজ দ্বারা আচ্ছাদিত। মসজিদটির উত্তর দক্ষিণে দৈর্ঘ্য ১৯.১৩ মিটার এবং পূর্ব পশ্চিমে প্রস্থ ১২.৬০ মিটার। অভ্যন্তরভাগে এর দৈঘ্য ও প্রস্থ যথাক্রমে ১৫.৭৭ মিটার ও ৯.৬০ মিটার এবং দেওয়াল ১.৫৭ মিটার পুরু। এ মসজিদটি কিবলা কোঠা দেওয়ালের লম্বে, পাঁচটি স্তম্ভপথে (‘বে’) এবং উত্তর-দক্ষিণে তিনটি স্তম্ভপথে আইল বিভক্ত হয়ে মোট পনেরটি চতুস্কোনাকার এলাকায় বিভক্ত হয়েছে। বাংলাদেশের অবস্থিত অন্যতম প্রাচীন এ মসজিদে প্রাথমিক সুলাতানি আমলে বিকশিত মসজিদ স্থাপত্যরীতির সকল বৈষ্ট্যই পরিলক্ষিত হয়।

ইলিয়ট ব্রীজ

ইলিয়ট ব্রিজ সিরাজগঞ্জ শহরের কাটা খালের উপরে লোহা ও সিমেন্টের সমন্বয়ে তৈরী। সিরাজগঞ্জ শহরকে দেখার জন্য কাঁটাখালের উপরে প্রায় ৩০ ফুট উঁচু করে ইংরেজ এসডিও মিঃ বিটসন বেল আই, সি, এস, সাহেব ১৮৯৫ সনে ৪৫,০০০ টাকা খরচ করে বাংলার তৎকালিন ছোট লাট স্যার আল ফ্রেড ইলিয়ট সাহেবের নামানুসারে এই ব্রিজ তৈরী করেছিলেন।

সে আমলে সন্ধ্যার পর ইলিয়ট ব্রিজের উপরে দাঁড়িয়ে সিরাজগঞ্জ শহরের একটি ভিন্নতর রূপ নজরে পড়তো। বর্তমানে উজ্জল নিয়ন বাতির আলোকমালায় সিরাজগঞ্জের প্রতিটি সড়ক পথ শুধু উদ্ভাসিত নয়; সেই সাথে দোকানের রডলাইট ও হেড লাইটের আলো রাতের অন্ধকারকে দূরে সরিয়ে রাখে। তখন ইলিয়ট ব্রিজের উপর দাঁড়িয়ে তাকিয়ে থাকলে দেখা যেত ঘন অন্ধকারের মধ্যে আশপাশের কোনো অসিত্বই নাই। দিনের বেলায় দেখা গেছে, শহর থেকে অনেক দূরে অসংখ্য গ্রাম জনপদ গা-ঘেষাঘেষি করে দাঁড়িয়ে আছে। কিন্তু রাত্রিবেলায় সেই ইলিয়ট ব্রিজের উপর সেই একই জায়গায় দাঁড়ালে মনে হতো, বিশ্বচরাচরে আর কোথাও কোন কিছুর অসিত্ব নাই। শুধু ইলিয়ট ব্রিজের দু’পাশে, উত্তর, দক্ষিণ, পূর্ব পশ্চিমে এক মাইল পরিসর এলাকাতেই সমস্ত দেশটা এসে ভীড় জমিয়েছে।

 

চলন বিল

 

চলন বিল বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় বিল এবং সমৃদ্ধতম জলাভূমিগুলির একটি। দেশের সর্ববৃহৎ এই বিলটি বিভিন্ন খাল বা জলখাত দ্বারা পরস্পর সংযুক্ত অনেকগুলি ছোট ছোট বিলের সমষ্টি। বর্ষাকালে এগুলি সব একসঙ্গে একাকার হয়ে প্রায় ৩৬৮.০০ বর্গ কিমি এলাকার একটি জলরাশিতে পরিণত হয়। বিলটি সংলগ্ন তিনটি জেলা নাটোর, পাবনা ও সিরাজগঞ্জ এর অংশ বিশেষ জুড়ে অবস্থান করছে। চলন বিল সিরাজগঞ্জ জেলার রায়গঞ্জ ও পাবনা জেলার চাটমোহর উপজেলা দুটির অধিকাংশ স্থান জুড়ে বিস্তৃত। এছাড়া সিরাজগঞ্জ জেলার তাড়াশ থানার তিন চতুর্থাংশই এ বিলের মধ্যে অবস্থিত। বিলটির দক্ষিণ-পূর্ব প্রান্ত পাবনা জেলার নুননগরের কাছে অষ্টমনীষা পর্যন্ত বিস্তৃত। এ জেলায় চলন বিলের উত্তর সীমানা হচ্ছে সিংড়ার পূর্ব প্রান্ত থেকে ভদাই নদী পর্যন্ত টানা রেখাটি যা নাটোর, পাবনা ও বগুড়া জেলার মধ্যবর্তী সীমানা নির্দেশ করে। ভদাই নদীর পূর্ব পাড়ে অবস্থিত তাড়াশ উপজেলা ও পাবনা জেলা বরাবর উত্তর-দক্ষিণমূখী একটি রেখা টানলে তা হবে বিলটির মোটামুটি পূর্ব সীমানা। বিলটির প্রশস্ততম অংশ উত্তর-পূর্ব কোণে তাড়াশ থেকে গুমনী নদীর উত্তর পাড়ের নারায়ণপূর পর্যন্ত প্রায় ১৩ কিমি বিস্তৃত। সিংড়া থেকে গুমনী পাড়ের কচিকাটা পর্যন্ত অংশে এটির দৈর্ঘ্য সবচেয়ে বেশি, ২৪ কিমি। ব্রহ্মপুত্র নদ যখন তার প্রবাহপথ পরিবর্তন করে বর্তমান যমুনায় রূপ নেয়, সে সময়েই চলন বিলের সৃষ্টি। করতোয়া ও আত্রাই নদীর পরিত্যাক্ত গতিপথ অন্তর্ভুক্তির মাধ্যমে একটি ব্যাপক বিস্তৃত হ্রদে পরিণত হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত এটি সম্ভবত একটি পশ্চাৎজলাভূমি ছিল। চলন বিলের গঠন ঐতিহাসিকভাবেই আত্রাই ও বড়াল নদীর সংকোচনের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত। আত্রাই নদী ছিল চলন বিলের প্রধান যোগানদাকারী প্রণালী যা রাজশাহী জেলার উত্তরাংশ ও দিনাজপুর এলাকার জল নিস্কাশন করত। বড়াল চলন বিল থেকে জল নির্গমন পথ হিসেবে কাজ করে এবং বিলের পানি বহন করে যমুনা নদীতে ফেলে। গঠিত হওয়ার সময় চলন বিলের আয়তন ছিল প্রায় ১,০৮৮ বর্গ কিমি। চলন বিলের দক্ষিণ প্রান্ত ঘেঁষে রয়েছে গুমনী নদী যা বিলটির পানি বয়ে নিয়ে প্রথমে বড় বিলে ফেলে এবং শেষ পর্যন্ত যমুনায় পতিত হয়। যমুনা বন্যা প্লাবিত হয়ে পানির উচ্চতা বেড়ে গেলে বড়াল সেই পানি কিছুটা ধরে রাখে এবং বিলের পানিও বেড়ে যায়; যমুনার পানি নেমে না যাওয়া পর্যন্ত পানির এই উচ্চতা কমে না। শুষ্ক মৌসুমে বিলের বৃহত্তর অংশ শুকিয়ে ২৫.৯ থেকে ৩১.০৮ বর্গ কিমি আয়তনের এক জল গহবরে পরিণত হয়, যাকে বিলের ‘মুল অংশ’ বলা যেতে পারে। এই মুল অংশ অবশ্য অব্যাহত পানি সরবরাহ থেকে বঞ্চিত, বরং কিছু সংখ্যক অগভীর জলাশয়ের সমষ্টি যা পরস্পর অত্যন্ত আঁকাবাঁকা কিছু খাল দ্বারা সংযুক্ত। এই মূল অংশকে ঘিরে দুটি এককেন্দ্রিক অসম ডিম্বাকার এলাকা আছে যেখানে আঞ্চলিকভাবে ‘ভাসমান ধান’ নামে পরিচিত সরু চালের ধান উৎপন্ন হয়। বর্তমানে চলন বিল দ্রুত ভরাট হয়ে যাচ্ছে। প্রতি বছর গঙ্গা থেকে পলি এসে পড়ার দরুন বিগত দেড়শ বছরে বিলটি দক্ষিণ দিক থেকে অন্ততপক্ষে ১৯.৩২ কিমি সরে এসেছে। বিলটিতে প্রবাহদানকারী নদীগুলি, যথা গুড়, বড়াল ইত্যাদিও এটির আয়তন সংকোচনের ক্ষেত্রে যথেষ্ট ভূমিকা রাখছে। বিলটির পানি নিষ্কাশন প্রণালী এবং পলি সঞ্চলের বিষয়টি অনুসন্ধান করে দেখার জন্য গণপূর্ত বিভাগ ১৯০৯ সালে একটি জরিপ চালিয়ে দেখেছে যে, চলন বিল তার পূর্বেকার আয়তন ১,০৮৫.০০ বর্গ কিমি থেকে সংকুচিত হয়ে ৩৬৮.০০ বর্গ কিমি এ দাড়িয়েছে। অবশিষ্ট জমি ব্যবহৃত হয়েছে চাষাবাদ অথবা জনবসতির জন্য। এই হ্রাসপ্রাপ্ত এলাকার মাত্র ৮৫ বর্গ কিমি -এ সারা বছর ধরে পানি থাকে। চলন বিল বেশ দ্রুত ভরাট হয়ে আসছে। জমি পুনরুদ্ধার হচ্ছে এবং বিলের ধার দিয়ে গড়ে উঠছে গ্রাম। কেবল কেন্দ্রের গভীরতম অংশটুকু ছাড়া শুকনো মৌসুমে সমস্ত ছোট-বড় বিল শুকিয়ে যায়। কেন্দ্রের বাইরে প্রান্তীয় এলাকাগুলিতে শুষ্ক মৌসুমে বোরো ও উচ্চ ফলনশীল ধান চাষ করা হয়। বর্ষার সময় অগভীর প্রান্তীয় এলাকায় গভীর পানির আমন ধান চাষ করা হয়। উত্তরবঙ্গের মাছের চাহিদা পূরণে চলনবিল এখনও গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে।

 

মখদুম শাহের মাজার


বাংলার আউলিয়া-দরবেশের মধ্যে মখদুম শাহ খুবই পরিচিতি ও শ্রদ্ধাভাজন ব্যক্তিত্ব। সিরাজগঞ্জ জেলার শাহজাদপুরে পুরানো শাহী মসজিদের পাশ্ববর্তী কবরস্থানে তিনি শায়িত আছেন। স্থাপত্য রীতির বিবেচনায় বলা যায় যে, শাহজাদপুর মসজিদটি মুঘলপূর্ব যুগে নির্মিত। মসজিদটির গাত্রে কোন অভিলেখ না থাকায় এর নির্মাণ তারিখ নিশ্চিতভাবে বলা যাবে না। এ কারণে এবং লিখিত সাক্ষ্যের অনুপস্থিতিতে দরবেশ মখদুম শাহ এর পরিচিতি ও ইতিহাস সঠিক ভিত্তির উপর দাঁড় করানো সম্ভব নয়। এতদঞ্চলে প্রচলিত জনশ্রুতিই মখদুম শাহ সমন্ধে জানার একমাত্র উৎস। প্রায় একশত বছর পূর্বে এ কাহিনী সংগ্রহ করে কলকাতার এশিয়াটিক সোসাইটি পত্রিকায় প্রকাশ করা হয়। প্রচলিত কাহিনী অনুযায়ী ইয়েমেনের জনৈক রাজা মুয়াজ বিন জবলের এক কন্যা ও দুই পুত্রের একজন ছিলেন মখদুম শাহ দৌলাহ। পিতার অনুমতি নিয়ে তিনি নিজে এবং আরও বারোজন আউলিয়াসহ বিধর্মীদের দেশে ইসলাম প্রচারের উদ্দেশ্যে বের হন। এছাড়া স্বীয় বোন এবং খাজা কালাম দানিশমন্দ, খাজা নুর ও খাজা আনোয়ার নামে তাঁর তিন ভাগনে তাঁর সঙ্গী হয়েছিলেন। পথিমধ্যে বোখারাত শেক জালালুদ্দীন বোখারীর সঙ্গে তাঁর দেখা হয়। শুভেচ্ছার নিদর্শন স্বরূপ তিনি মখদুম শাহকে ধুসর রঙের এক জোড়া কবুতর উপহার দেন। বোখারা থেকে দলটি বাংলা অভিমুখে যাত্রা করে। তিনি দলবলসহ বাংলায় এসে জনৈক হিন্দু রাজার শাসনাধীন শাহজাদপুর নামক লোকালয়ে বসবাস শুরু করেন। ঐ রাজার রাজ্য বিহার পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল। মখদুম শাহ ও তাঁর অনুসারীদের উৎখাত করার জন্য রাজা আদেশ দেন। ফলে দু’দলের মধ্যে তীব্র যুদ্ধ শুরু হয়। যুদ্ধে খাজা নুর ব্যতীত মখদুম শাহ ও তাঁর অন্যান্য সাথী শাহাদত বরণ করেন। এ বিষাদময় ঘটনা থেকে পরিত্রাণ পেয়ে পরবর্তী সময়ে খাজা নুর সোনারগাঁও এর এক রাজকুমারীকে বিয়ে করেন। শাহজাদপুর পরিবার যারা মখদুম শাহ দৌলার বংশ বলে দাবি করে আসছে, তারা সম্ভবত খাজা নুর ও সোনাগাঁয়ের রাজকুমারীর বংশধর। মখদুম শাহ দৌলাহ যে পরিবেষ্টিত প্রাঙ্গণে শায়িত আছেন ঠিক সেখানে শাহ ইউসুখের সামাধি সৌধ অবস্থিত। মখদুম শাহের অন্যান্য অনুসারীদের পাশে একটি আঙ্গিনায় কবর দেওয়া হয়। শামসুদ্দীন তাব্রিজিকে (প্রখ্যাত ‘মসনভি’ রচয়িতা মেশ জালালুদ্দীন রুমির শিক্ষক শামসুদ্দীন তাব্রিজি নন। তিনি কখনও বাংলায় এসেছেন বলে জানা যায় না) শাহ দৌলাহ শহীদের অনুসারী বলে ধরা হয়। পৃথক অন্য একটি আঙ্গিনায় শামসুদ্দীন তাব্রিজি শায়িত আছেন। অন্যান্যরা যাঁদেরকে মখদুম শাহীর অনুসারি ধরা হয় এবং যাঁদের সমাধি একই অঙ্গিনায় অবস্থিত তাঁরা হলেন শাহ খিনগার, শাহ আজমল, হাসিল পীর , শাহ বোদলা, শাহ আহমদ এবং শাহ মাহমুদ। তাঁর অন্যান্য কিছু সহচরদের গণকবর দেওয়া হয় এবং তা গঞ্জ-ই-শাহীদান নামে পরিচিত। মখদুম শাহের বোন নিকটবর্তী নদীতে ঝাপ দিয়ে আত্নহত্যা করেন এবং ঐ জায়গাটি এখনও ‘সতীবিবির ঘাট’ নামে পরিচিত। যেহেতু মখদুম শাহ ইয়েমেনের রাজ্যের শাহজাদা নামে পরিচিত, তাই তাঁর নামানুসারে স্থানাটির নামকরণ করা হয় শাহজাদপুর। মুসলিম আমলে শাহজাদপুর পরগনা ইউসুফশাহীর অন্তর্ভুক্ত ছিল। ইউসুফ শাহ এর নামানুসারে এ পরগনার নামকরণ করা হয়। ৭২২ বিঘা জমি নিয়ে একটি বিরাট এস্টেট শাহজাদপুর দরগাহ ও মসজিদের রক্ষণাবেক্ষণের জন্য দান করা হয়। এ এস্টেট এখনও মখদুম শাহের ভাগনে খাজা নুরের বংশধরেরা ভোগ-দখল করছেন। মখদুম শাহ দৌলাহর বাংলায় আগমনের তারিখ নির্ণয় করা যায়নি। প্রচলিত কাহিনী অনুসারে, তুর্কি আক্রমনের পূর্বে দ্বাদশ শতাব্দীতে তিনি এবং তাঁর সহচরগণ বাংলায় আসেন বলে ইঙ্গিত পাওয়া যায়। অবশ্য আধুনিক পন্ডিতগণ এ ধারণার ব্যাপারে সন্দিহান । ইয়েমেনের সুলতান মুয়াজ বিন জবলকে সনাক্ত করা সম্ভব হয়নি। এক মুয়াজ বিন জবল নবী হযরত মুহম্মদ (সঃ)-এর সাহাবি ছিলেন। তিনি ১৭ বা ১৮ হিজরিতে মারা যান। তাই নিশ্চিতভাবে বলা যায় যে, লোককাহিনীর মুয়াজ এবং মুহম্মদ (সঃ)-এর সাহাবি মুয়াজ কোনক্রমেই অভিন্ন ব্যক্তি নন। জালালউদ্দিন বোখারী, যাঁর সঙ্গে মখদুম শাহের দেখা হয়েছিল বলা হয় তিনি ১২৯১ সালে মৃত্যুবরণ করেন। অতএব, এ ব্যাপারে কালের পরিপ্রেক্ষিতে ধারণা করা হয় যে, মখদুম শাহ চতুর্দশ শতাব্দীর পূর্বে বাংলায় আসেননি এবং নিশ্চিতভাবেই বলা যায় যে, বখতিয়ারের বাংলা বিজয়ের পর তিনি এদেশে আসেন। শাহজাদপুর দরগাহে প্রতি বছর চৈত্র মাসে (মধ্য-এপ্রিল) এক মাসব্যাপী মেলা হয়। মেলার সময় এখানে সকল সম্প্রদায়ের লোকের সমাগম হয়। দরগায় উৎসর্গীকৃত সামগ্রীর মধ্যে চাল, চিনি, মিষ্টি, মোরগ এবং চেরাগ (এক ধরণের ব্রতমূলক বাতি) প্রধান।

 

                                                              যমুনা বহুমূখী সেতু 

                            

বাংলাদেশ ও দক্ষিণ এশিয়ার দীর্ঘতম এবং বিশ্বের ১১তম দীর্ঘ সেতু এটি। ১৯৯৮ সালের জুন মাসে এটি উদ্বোধন করা হয়। বাংলাদেশের ৩টি বড় নদীর মধ্যে সবচেয়ে বৃহত্তম এবং পানি নির্গমনের দিক থেকে বিশ্বের পঞ্চম বৃহত্তম নদী যমুনার উপর এটি নির্মিত হয়েছে। বাংলাদেশের স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান এর নামানুসারে সেতুটির নামকরণ করা হয়। বঙ্গবন্ধু সেতু বাংলাদেশের পুর্বাঞ্চল ও পশ্চিমাঞ্চলের মধ্যে সংযোগ স্থাপন করে দুই অংশকে একত্রিত করেছে। এই সেতু নির্মাণের ফলে জনগণ বহুভাবে লাভবান হচ্ছে এবং এটি আন্তঃআঞ্চলিক ব্যবসায় ও আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে। সড়ক ও রেলপথে দ্রুত যাত্রী ও মালামাল পরিবহন ছাড়াও এই সেতু বিদ্যুৎ ও প্রাকৃতিক গ্যাস সঞ্চালন এবং টেলিযোগাযোগ সমন্বিত করার অপুর্ব সুযোগ করে দিয়েছে। টাঙ্গাইল থেকে সিরাজগঞ্জ পর্যন্ত বিস্তৃত এই সেতু এশীয় মহাসড়ক ও আন্তঃএশীয় রেলপথের উপর অবস্থিত। এ দুটি সংযোগপথের কাজ শেষ হওয়ায় দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া থেকে উত্তর-পশ্চিম ইউরোপ পর্যন্ত অবিচ্ছিন্ন আর্ন্তজাতিক সড়ক ও রেলসংযোগ স্থাপিত হয়। সেতুটি নির্মাণে মোট খরচ হয় ৯৬২ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। আইডিএ, জাপানের ওইসিএফ প্রত্যেকে ২২ শতাংশ পরিমাণ তহবিল সরবরাহ করে এবং বাকি ৩৪ শতাংশ ব্যয় বহন করে বাংলাদেশ। সেতুটির দৈর্ঘ্য ৪.৮ কিঃ মিঃ এবং প্রস্থ ১৮.৫ মিঃ। যমুনা নদীর প্রধান চ্যানেলের প্রস্থ ৩.৫ কিলোমিটারের বেশি নয়। এই বিষয়টি মাথায় রেখে এবং বন্যাজনিত কারণের জন্য আরও কিছুটা প্রশ্বস্ততা বাড়িয়ে ৫ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের একটি সেতু যথেষ্ট বলে বিবেচনা করা হয়। ভৌত অবকাঠামোর কাজ শুরু করার এক বছর পর ১৯৯৫ সালের অক্টোবর মাসে সেতুটির মূল অংশ ৪.৮ কিরোমিটার ধরে চূড়ান্ত প্রকল্প অনুমোদিত হয়। যদিও বন্যায় নদী ১৪ কিলোমিটার পর্যন্ত প্রশস্ত হয়ে থাকে, সার্বিক প্রকল্প ব্যয় অর্থনৈতিকভাবে লাভজনক অবস্থায় রাখার জন্য উক্ত সংকোচন অত্যাবশক বিবেচনা করা হয়। এ জন্য অবশ্য নদীর প্রবাহ সেতুর নিচ দিয়ে সীমাবদ্ধ রাখার উদ্দেশ্যে নদী শাসনের প্রয়োজন দেখা দেয়। সম্ভাব্য দৈব দুর্বিপাক ও ভুমিকম্প যাতে সহ্য করতে পারে সেজন্য সেতুটিকে ৮০-৮৫ মিটার লম্বা এবং ২.৫ ও ৩.১৫ মিটার ব্যাসের ১২১টি ইস্পাতের খুঁটির উপর বসানো হয়েছে। এই খুঁটিগুলি খুবই শক্তিশালী (২৪০টন) হাইড্রোলিক হাতুড়ি দ্বারা বসানো হয়। সেতুটিতে স্প্যানের সংখ্যা ৪৯ এবং ডেক খন্ডের সংখ্যা ১,২৬৩। সেতুটির উপর দিয়ে ৪ লেনের সড়ক এবং ২টি রেলট্র্যাক নেওয়া হয়েছে। সেতুটির উপরিকাঠামো ঢালাই করা খন্ডাংশ দিয়ে তৈরি এবং এগুলি সুস্থিত খিলান পদ্ধতিতে বসানো হয়েছে। সেতুটি নির্মাণে সর্বমোট যে ব্যয় হয় মিলিয়ন ডলারে তার বিভাজন হচ্ছে; সেতু এবং তার উপরে তৈরি পথসমূহ-২৬৯, নদীশাসন-৩২৩, রাস্তা ও বাঁধসমূহ-৭১, উপদেষ্টা- ৩৩, ভূমি অধিগ্রহণ, পুনর্বাসন এবং পরিবেশ সংরক্ষণ -৬৭, সংস্থাপন-১৩, এবং অন্যান্য ১৮৬। উপমহাদেশের এই অংশের জনগণ সর্বদাই বিশাল যমুনা নদীর উপর দিয়ে সেতু স্থাপনের মাধ্যমে গোটা দেশের সঙ্গে এই অঞ্চলের যোগাযোগ ব্যবস্থা সমন্বয়ের আকাঙ্খা পোষণ করে এসেছে। ১৯৪৯ সালে জননেতা আবদুল হামিদ খান ভাসানী প্রথম রাজনৈতিক পর্যায়ে যমুনা সেতু নির্মাণের দাবি উত্থাপন করেন। ১৯৫৪ সালে পূর্ব পাকিস্তানের প্রাদেশিক নির্বাচনের সময় যুক্তফ্রন্টের ২১ দফা নির্বাচনী ইশতেহারে এই সেতু নির্মাণের কথা অন্তর্ভুক্ত ছিল। ১৯৬৪ সালের ৬ জানুয়ারী রংপুর থেকে নির্বাচিত সংসদ সদস্য মোহাম্মদ সাইফুর রহমান যমুনা নদীর উপর সরকারের সেতু নির্মাণের কোন ইচ্ছা আছে কি-না জানতে চেয়ে প্রাদেশিক পরিষদে প্রশ্ন উত্থাপন করেন। ১৯৬৬ সালের ১১ জুলাই রংপুর থেকে একই পরিষদের আরেকজন সদস্য শামসুল হক এই সেতু নির্মাণের জন্য একটি প্রস্তাব পেশ করেন এবং এটি সর্বসম্মতিক্রমে গৃহীত হয়। ১৯৬৯ সালে যুক্তরাজ্যের ফ্রিমান ফক্স অ্যান্ড পার্টনার্স নামে একটি প্রতিষ্ঠান সেতুটির প্রাথমিক সম্ভাব্যতা নিয়ে সমীক্ষা পরিচালনা করে। তারা সিরাজগঞ্জের নিকট আনুমানিক ১৭৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার ব্যয়ে একটি রেল-কাম-সড়কসেতু নির্মাণের সুপারিশ করেন। এই সমীক্ষা ছিল প্রাথমিক ধরনের এবং তারা বিস্তারিত সমীক্ষা পরিচালনার সুপারিশ করেন। অন্যদিকে ১৯৭০ সালে পাকিস্তানের সাধারণ নির্বাচনের প্রাক্কালে বেতার-টেলিভিশনে জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণদানকালে আওয়ামী লীগ নেতা শেখ মুজিবর রহমান তাঁর দলের নির্বাচনী ওয়াদা হিসেবে যমুনা সেতু নির্মাণের কথা উত্থাপন করেন। এ সকল প্রচেষ্টা তৎকালীন রাজনৈতিক অস্থিরতা এবং মুক্তিযুদ্ধের কারণে বাস্তবায়িত হতে পারে নি। স্বাধীনতার পর আওয়ামী লীগ সরকার ১৯৭২ সালে যমুনা নদীর উপর একটি সেতু নির্মাণের ঘোষণা দেয় এবং ১৯৭২-৭৩ সালের বাজেটে এজন্য বরাদ্দ রাখা হয়। বাংলাদেশ সরকারের আমন্ত্রণে জাপান আর্ন্তজাতিক সহযোগিতা সংস্থা জাইকা ১৯৭৩ সালে যমুনা নদীর উপর একটি সড়ক-কাম-রেলসেতু নির্মাণের সম্ভাব্যতা-সমীক্ষা হাতে নেয়। ১৯৭৬ সালে জাপান তাদের সমীক্ষা শেষ করে। তারা বলে যে যমুনা প্রকল্পে ৬৮৩ মিলিয়ন মার্কিন ডলার ব্যয় হবে এবং এর অর্থনৈতিক আগমের হার মাত্র ২.৬ শতাংশ। যেহেতু এটা প্রযুক্তিগত ও অর্থনৈতিক দিক দিয়ে লাভজনক নয়, তৎকালীন সরকার প্রকল্পটি পরিত্যক্ত ঘোষণা করে। ১৯৮২ সালে সরকার যমুনা সেতু প্রকল্প পুনরুজ্জীবিত করে। এ সময় সরকার যমুনার ওপারে পশ্চিমাঞ্চলে প্রাকৃতিক গ্যাস সঞ্চালনের সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের জন্য একটি সমীক্ষা দল নিয়োগ করে। সমীক্ষার উপসংহারে বলা হয় যে, শুধু গ্যাস সংযোগ অর্থনৈতিকভাবে লাভজনক হবে না। উপদেষ্টাগণ একটি সড়ক-কাম-গ্যাস পরিবাহক সেতুর প্রকৌশলগত সম্ভাব্যতা ও এর ব্যয় নির্ধারণ করেন। এভাবেই বহুমুখী সেতু নির্মাণের প্রাথমিক ধারণার উৎপত্তি হয়। তিন লেন বিশিষ্ট ১২ কিঃ মিঃ দীর্ঘ সেতুর প্রাক্কলিত ব্যয় ধরা হয় ৪২০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। মন্ত্রিসভা এই রিপোর্ট অনুমোদন করে এবং এই প্রকল্পের অনুকূলে তাৎক্ষণিক পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য একটি সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। এই প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য ১৯৮৫ সারের ৩ জুলাই রাষ্ট্রপতির অধ্যাদেশ বলে যমুনা বহুমুখী সেতু কর্তৃপক্ষ গঠিত হয়। অভ্যন্তরীণ সম্পদ সংগ্রহের উদ্দেশ্যে যমুনা সেতু সারচার্জ ও লেভি আদায়ের জন্য আরেকটি অধ্যাদেশ জারি করা হয়। অধ্যাদেশটির বিলুপ্তি পর্যন্ত এই প্রক্রিয়ায় ৫.০৮ বিলিয়ন টাকা সংগ্রহ করা হয়। ১৯৮৬ সালে এই সেতুর জন্য প্রথম পর্যায়ের সম্ভাব্যতা-সমীক্ষা পরিচালনা করা হয়। এ সময় সিরাজগঞ্জ ও ভূয়াপুর (টাঙ্গাইল) মর্ধবর্তী স্থানকে সেতুর জন্য সবচেয়ে উপযুক্ত স্থান বলে চিহ্নিত করা হয়। ১৯৮৭ সালের মধ্যে দ্বিতীয় পর্যায়ের সম্ভাব্যতা-সমীক্ষা পরিচালিত হয়। এতে দেখা যায় যে একটি সড়ক-কাম-রেল-বিদ্যুৎ-গ্যাস লাইন পরিবাহী সেতু অর্থনৈতিক ও প্রযুক্তিগত উভয় দিক থেকেই লাভজনক হবে। ১৯৯২ সালে আইডিএ, এডিবি ও জাপানের ওইসিএফ সেতুর জন্য প্রয়োজনীয় অর্থায়নে সম্মত হয়। নির্মাণ চুক্তির জন্য ১৯৯৩ সালে আন্তর্জাতিক বিডিং এর মাধ্যমে দরপত্র আহবান করা হয়। সেতু নির্মাণ, নদী শাসনের কাজ এবং দুটি সংযোগ সড়ক নির্মাণ কাজের চুক্তি ১৯৯৪ সালের মার্চ মাসে সম্পাদিত হয়। ১৯৯৪ সালের ১০ এপ্রিল সেতুর ভিত্তি প্রস্তর স্থাপিত হয়। ১৯৯৪ সারের ১৫ অক্টোবর প্রকল্পের ভৌত নির্মাণ কাজ বাস্তবায়ন শুরু হয় এবং গ্যাস সঞ্চালন লাইন ব্যতীত সকল কাজ ১৯৯৮ সালের জুনের মধ্যে শেষ হয়। ১৯৯৮ সালের ২৩ জুন সেতুটি চলাচলের জন্য উম্মুক্ত করা হয়।

 

এই সাইটে নিজম্ব নিউজ তৈরির পাশাপাশি বিভিন্ন নিউজ সাইট থেকে খবর সংগ্রহ করে সংশ্লিষ্ট সূত্রসহ প্রকাশ করে থাকি। তাই কোন খবর নিয়ে আপত্তি বা অভিযোগ থাকলে সংশ্লিষ্ট নিউজ সাইটের কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করার অনুরোধ রইলো।বিনা অনুমতিতে এই সাইটের সংবাদ, আলোকচিত্র অডিও ও ভিডিও ব্যবহার করা বেআইনি।