আপিল বিভাগের বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বে এই সার্চ কমিটিতে রয়েছেন_ হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি ওবায়দুল হাসান, সরকারি কর্মকমিশন চেয়ারম্যান ড. মোহাম্মদ সাদিক, মহাহিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রক (সিএজি)
মাসুদ আহমেদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের অধ্যাপক ড. সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. শিরীন আখতার।
এ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, ‘রাষ্ট্রপতি তার ক্ষমতাবলে সার্চ কমিটি গঠন করেছেন। এ কমিটিতে রাখার জন্য আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে কোনো নাম দেওয়া হয়নি।’ ওবায়দুল কাদের মনে করেন, রাষ্ট্রপতি যোগ্য ব্যক্তিদের দিয়েই নিরপেক্ষ ও স্বচ্ছ সার্চ কমিটি গঠন করেছেন। তবে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর জানিয়েছেন, সার্চ কমিটির সদস্যদের নাম দেখে তারা শুধু হতাশই নন, ক্ষুব্ধও হয়েছেন। তিনি বলেন, ‘তারা তো সবাই সরকারের পছন্দের লোক। জানি না, এই সার্চ কমিটি কী ধরনের নির্বাচন কমিশন গঠন করবে।’
কমিটির সদস্যদের প্রতিক্রিয়া :তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় সার্চ কমিটিতে স্থান পাওয়া পিএসসির চেয়ারম্যান ড. মোহাম্মদ সাদিক সমকালকে বলেন, ‘কমিটি গঠনে যে শর্তাবলি দেওয়া হয়েছে, সেগুলো অনুসরণ করে একজন সদস্য হিসেবে আমি কমিটির সঙ্গে কাজ করব।’
মহাহিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রক (সিএজি) মাসুদ আহমেদ জানান, সাংবিধানিক পদের ভাবমূর্তি অক্ষুণ্ন রেখে তিনি তার দায়িত্ব পালন করবেন। ড. শিরীন আখতার তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় সাংবাদিকদের জানান, এটি অনেক গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব। ১৬ কোটি মানুষের জন্য তিনি যে দায়িত্ব পেয়েছেন, তা অবশ্যই সততা ও নিষ্ঠার সঙ্গে পালন করবেন।
যেভাবে প্রজ্ঞাপন জারি :বঙ্গভবন সূত্রে জানা যায়, রাষ্ট্রপতির সংলাপে অংশ নেওয়া রাজনৈতিক দলের প্রস্তাবগুলো একটি কার্যবিবরণীতে লিপিবদ্ধ করা হয়। এরপরই রাষ্ট্রপতির কার্যালয় থেকে সার্চ কমিটি গঠনে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগকে নির্দেশনা দেওয়া হয়। কমিটির কাঠামো ঠিক করে দেন রাষ্ট্রপতি। এতে বলা হয়, সার্চ কমিটিতে চারজন সাংবিধানিক পদধারী ব্যক্তি ও দু’জন সুশীল সমাজের প্রতিনিধি থাকবেন। সাংবিধানিক ব্যক্তিদের মধ্যে একজন আপিল বিভাগের ও অন্যজন হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি থাকবেন। অপর দুই সাংবিধানিক পদধারীর মধ্যে থাকবেন পিএসসির চেয়ারম্যান এবং মহাহিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রক (সিএজি)। তবে দু’জন বিচারপতিকে মনোনয়ন দেওয়ার দায়িত্ব প্রধান বিচারপতির ওপর ছেড়ে দেওয়া হয়। বিচারপতি মনোনয়নে দুপুরে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ সচিব ও আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বৈঠক করেন। পরে মন্ত্রিপরিষদ সচিব প্রধান বিচারপতির সঙ্গে দেখা করলে তিনি দু’জন বিচারপতি নিয়োগ দেন। এর পর মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে সার্চ কমিটি-সংক্রান্ত প্রস্তাব তৈরি করে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার স্বাক্ষর নিয়ে গতকাল রাতে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়।
আগামী ৮ ফেব্রুয়ারি কাজী রকিবউদ্দীন আহমদের নেতৃত্বাধীন বর্তমান ইসির মেয়াদ শেষ হচ্ছে। অবশ্য একজন কমিশনার এ কে এম শাহনেওয়াজের মেয়াদ শেষ হবে ১৫ ফেব্রুয়ারি। তিনি যোগ দিয়েছিলেন পরে। কারও কারও মতে, একজন কমিশনার থাকলেও ইসির অস্তিত্ব থাকবে। তবে তাকে প্রধান নির্বাচন কমিশনার হতে হলে আবারও পৃথক শপথের প্রয়োজন হবে। কেননা, প্রধান নির্বাচন কমিশনারের শপথ আলাদা। এই বিবেচনায় অনেকে বলছেন, ১৪ ফেব্রুয়ারির মধ্যে ইসি পুনর্গঠন করলেও চলবে। তবে সংবিধান অনুযায়ী, প্রধান নির্বাচন কমিশনারের নেতৃত্বে কমিশন থাকার কথা বলা হয়েছে। ১৪ ফেব্রুয়ারির আগে নির্বাচন কমিশন গঠন করা হবে বলে সরকারি একটি সূত্রে জানা গেছে।
সুশীল সমাজের প্রতিনিধি যুক্ত করা হয়েছে :এই সার্চ কমিটি গঠনের ক্ষেত্রে রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ বিদায়ী ইসি গঠনে ২০১২ সালে প্রয়াত রাষ্ট্রপতি মো. জিল্লুর রহমান অনুসৃত পদ্ধতিই অনুসরণ করেছেন। তবে সুশীল সমাজের প্রতিনিধি হিসেবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের শিক্ষক ড. সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম ও নারী প্রতিনিধি হিসেবে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য ড. শিরীন আখতারকে অন্তর্ভুক্ত করে এর আকার বাড়িয়েছেন। জিল্লুর রহমান আপিল বিভাগের বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বেই চার সদস্যের সার্চ কমিটি নিয়োগ দিয়েছিলেন।
নতুন সার্চ কমিটি প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এবং নির্বাচন কমিশনারদের (ইসি) নাম রাষ্ট্রপতির কাছে সুপারিশ করবে। সংবিধানের ১১৮ অনুচ্ছেদ প্রদত্ত ক্ষমতা অনুযায়ী রাষ্ট্রপতি সুপারিশকৃত নামগুলো থেকে প্রধান নির্বাচন কমিশনারসহ অন্য কমিশনার নিয়োগ করবেন। এর পর শপথ নেবে নতুন নির্বাচন কমিশন।
সংলাপের পরিপ্রেক্ষিতে সার্চ কমিটি :সার্চ কমিটি গঠনের আগে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ গত ১৮ ডিসেম্বর থেকে বঙ্গভবনে নতুন নির্বাচন কমিশন গঠনের জন্য নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপ শুরু করেন। সংসদের বাইরে থাকা সরকারবিরোধী প্রধান দল বিএনপির সঙ্গে আলোচনার মধ্য দিয়ে এ সংলাপ শুরু হয়। এরপর ১৮ জানুয়ারি পর্যন্ত এক মাসে রাষ্ট্রপতি ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও বিরোধী দল জাতীয় পার্টিসহ ৩১টি দলের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে সংলাপ করেন।
সংলাপে অংশ নেওয়া অন্য দলগুলো হলো_ জাতীয় পার্টি, জাসদ (ইনু), ওয়ার্কার্স পার্টি, জাসদ (আম্বিয়া), জাতীয় পার্টি (জেপি), কৃষক-শ্রমিক জনতা লীগ, এলডিপি, বিএনএফ, ইসলামী ঐক্যজোট, তরীকত ফেডারেশন, বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি (বিজেপি), সিপিবি, ন্যাপ, সাম?্যবাদী দল, বিকল্পধারা, জেএসডি, বাসদ, ইসলামী আন্দোলন, গণতন্ত্রী পার্টি, গণফোরাম, খেলাফত আন্দোলন, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস, বাংলাদেশ ন্যাপ, গণফ্রন্ট, খেলাফত মজলিস, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম, জাকের পার্টি, ইসলামী ফ্রন্ট ও মুসলিম লীগ (বিএমএল)।
৩১ দলের সঙ্গে এ সংলাপের পরিপ্রেক্ষিতেই নতুন নির্বাচন কমিশন গঠনে সার্চ কমিটি গঠন করলেন আবদুল হামিদ। তবে সংলাপের সময় আওয়ামী লীগসহ অধিকাংশ রাজনৈতিক দলই নির্বাচন কমিশন (ইসি) পুনর্গঠনে স্থায়ী আইন প্রণয়নের আহ্বান জানিয়েছিল। বিএনপি অবশ্য সব রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলোচনা সাপেক্ষে ঐকমত্যের ভিত্তিতে নির্বাচন কমিশন গঠনের দাবি জানিয়ে সার্চ কমিটি গঠনসহ ১৩ দফা প্রস্তাব দিয়েছিল। আর নির্বাচন কমিশন (ইসি) গঠনের আইন প্রণয়নসহ পাঁচ দফা প্রস্তাব দিয়েছিল জাতীয় পার্টি। অবশ্য নতুন ইসি গঠনে অধিকাংশ রাজনৈতিক দলের আইন প্রণয়নের প্রস্তাবের বিপরীতে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক জানিয়েছিলেন, ইসি নিয়োগে তাড়াহুড়া করে আইন প্রণয়নের পক্ষে নয় সরকার।