বছর ঘুরে এল আবার আরবী বর্ষের প্রথম মাস ‘মহররম’। এই মাসের ১০ তারিখ আমাদের সবার কাছে আশুরার দিন নামে সমধিক পরিচিত। পৃথিবীর সৃষ্টি হতে বিভিন্ন উল্লেখযোগ্য ঘটনা এই দিনে ঘটেছে। পৃথিবীর সৃষ্টিও হয়েছে এই দিনে। যা এককথায় বলা যায় পৃথিবীর জন্মদিন, আবার পৃথিবীর ধ্বংসও হবে এই দিনে। এই দিনে আল্লাহু সুবহানাওয়াতায়ালা হযরত আদম (আ:) এর তওবা কবুল করেছেন। হযরত ইউনুছ (্আ:) কে মাছের পেট থেকে মুক্তি দিয়েছেন, হযরত মুসা (আ:) কে ফেরাউন এর উপর বিজয় দান করেছেন। এদিন আদম (আ:) সহ দুহাজার পয়গাম্বর জন্ম ও দু’হাজার পয়গাম্বর ওফাতপ্রাপ্ত হন। আশুরাতে ইতিপূর্বে যাই ঘটুক না কেনো হিজরি ৬১ সালের ১০ই মহররম আমাদের প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ মোস্তফা (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর প্রিয় দৌহিত্র সপরিবারে নিরস্ত্র সঙ্গীসাথীসহ কারবালা ময়দানে শহীদ হন। ইতিহাসের সবচাইতে নির্মম ও বিয়োগান্তক ঘটনা ঘটেছিল এই কারবালার জমিনে। মানুষের মৌলিক চাহিদা পানি পান থেকে নিষ্ঠুর এজিদ বাহিনী নিরস্ত্র ইমাম হুসাইন রাদ্বিআল্লাহু তায়ালা আনহুর সঙ্গী সাথীদের বিরত রেখে বরং উল্টো হামলা চালায় সবাইকে শহীদ করে।
শুধুমাত্র উম্মতের নাজাতের জন্য আমাদের প্রিয়নবীর কলিজার টুকরা ইমাম হুসাইন (রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু) কুরবানী হয়েছেন। প্রিয় নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) উনার জীবদ্দশাতেই জানতেন যে, উনার প্রিয় নাতি কারবালার জমিনে শহীদ হবেন। উম্মুল মোমেনীন হযরত সালমা (রা:) কে প্রিয় নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এক শিশি মাটি দিয়ে বললেন, যে, এই মাটির রং যেদিন লাল হবে সেইদিন বুঝবে আমার নাতি কারবালার জমিনে শহীদ হয়েছে।
৬১ হিজরীর ১০ই মুহররম শুক্রবার দিবাগত রাতে ইমান তার পরিবারবর্গ ও সঙ্গীসাথীদের নিয়ে তাবুতে বসে করনীয় আলোচনা করলে কান্নার রোলে আকাশ বাতাশ প্রকম্পিত হয়ে উঠে। উম্মতের নাজাতের জন্য কেয়ামতের কঠিন ময়দানে প্রিয় নবীজির কলিজার টুকরা মা ফাতেমা (রা) আল্লাহর কাছে তাঁর সন্তানের প্রতিটি ফোটা রক্তের বিনিময়ে উম্মতের নাজাত বা মুক্তি চাইবেন।
যিনি আমাদের পাপের প্রায়শ্চিত্ত করার জন্য নিজের জীবন বিলিয়ে দিলেন সেই ইমাম হুসাইন (রা:) কে এই দিনে স্মরন করতে হবে। উনার সঙ্গী সাথী ৭৩ জন নিরপরাধ মুমিনরাও অন্যায়ের কাছে মামা নত করেননি। প্রকৃত ইসলামকে জিন্দা করার জন্য ইমাম হুসাইন (রা:) প্রান দিয়েছেন। ৬ মাসের মাসুম শিশু নবী বংশের আওলাদ ইমান আলী আসগর (রা:) এর বুকে যারা তীর মেরে দিল তারাও মুসলিম নামের কিছু কুলাঙ্গার এজিদের দোসর ছিল। এজিদের দাদা ছিল ইসলামের শত্রু আবু সুফিয়ান ও দাদী ছিল হিন্দা, যে নারী উহুদের যুদ্ধে নবীজির প্রিয় চাচা হযরত হামজা (রা:) এর কলিজা চিবিয়ে খেয়েছিল।
১০ই মহররম শোহাদারে কারবালার স্মরনে চোখের পানি ফেলে নিজেদের গুনাহ মাফের জন্য আল্লাহর দরবারে কান্নাকাটি করে ক্ষমা চাইতে হবে। বেশী বেশী এস্তেগফার করতে হবে। এই দিনে আল্লাহ সুবহানাহুতায়ালা বান্দাদের ক্ষমা করেন।
কারবালার জমিনে প্রমাণ হয়েছে কারা প্রকৃত ইসলাম প্রেমিক আর কারা দুনিয়ালোভী, ক্ষমতার লোভী, বেঈমান এজিদের অনুসারী। যারা জান্নাতে প্রবেশ করবেন তাদেরকে ইমাম হাসান (রা:) ও ইমাম হুসাইন (রা:) এর হাশরের ময়দান থেকে বাছাই করবেন। তাহলে বুঝা যায় ইমাম হাসান ইমাম হুসাইনকে সহ পাক পাঞ্জাতনকে ভালোবাসলে জান্নাত লাভ করা যাবে। আগামী ৯ই মহররম ও ১০ই মহররম অথবা ১০ ও ১১ই মহররম রোজা রাখার ফজিলত অপরিসীম। আমরা সবাই রোজা রাখবো ইনশাআল্লাহ। এই দুইদিন রোজা রাখলে হাদীসে আছে, আল্লাহতায়ালা বিগত ১ বছরের গুনাহ সমূহ মাফ করে দেবেন।
ইমাম হুসাইন (রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু) যদি চাইতেন পুরো কারবালা ময়দান পানিপূর্ণ হয়ে যেত, কিন্তু তিনিও তাঁর সঙ্গীরা, আওলাদে রাসূল (স:) রা উম্মতের নাজাতের জন্যই নিজেদের জীবন উৎসর্গ করেছেন। তাই আমরাও উনাদেরকে স্বরণ করে দোয়া ও ক্ষমা প্রার্থনা করলে করোনাকালের এই কঠিন সময়ে হয়তো বিপদ থেকে আমরা মুক্তি পাবো ইনশাআল্লাহ। আশুরার দিন গরীব মিসকীনদের সহায়তা করলেও অশেষ সাওয়াব পাওয়া যায়।