করোনার পাদূর্ভাবের উপর ঘূর্ণিঝড় আমফান যেন মরার উপর খাড়ার ঘা । উপকূলীয় অঞ্চলে এই মুহূর্তে করোনার চেয়ে ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলা জরুরী । দূর্যোগ মোকাবিলায় স্হানীয় প্রশাসন এবং ঘূর্ণিঝড় প্রস্তুতি কর্মসূচি কর্তৃক ব্যাপক প্রস্তুতি গ্রহন করা হচ্ছে । বিশেষ করে নিম্মান্চলের মানুষকে নিরাপদে আনার কাজ চলছে । আশ্রয় কেন্দ্রের পাশাপাশি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গুলোকে প্রস্তুত রাখা প্রয়োজন।
এখন সমস্যা দুইটি ।প্রথমত মানুষকে আশ্রয় কেন্দ্রে আনার পর করোনা সংক্রান্ত স্বাস্হ্য বিধি , সামাজিক দুরুত্বের মধ্যে তাদের কে আশ্রয় কেন্দ্রে রাখার ব্যবস্হা করা । দ্বিতীয়ত, মানুষ ঘূর্ণিঝড়ের সতর্ক সংকেত শুনে ঘর থেকে বের হতে চায়না ।বসত ভিটা ,ঘরের মালামালের মায়া ছেড়ে তারা অন্যত্র যেতে চায়না । অনেক চাপের মুখে জেলেরা কিনারে আসে।এবং অতি নিন্মান্চলের মানুষকে জোড় করে ঘর থকে বের করে আশ্রয় কেন্দ্রে নিতে হয় ।নিজের ইচ্ছায় মানুষ ঘর থেকে বের হয়না ।অনুরূপ করোনার ভয়াবহতা বুঝিয়ে মানুষকে ঘরে রাখা যায়নি ।
ঘূর্ণিঝড়ের সতর্কবার্তা প্রচার হয় অনেক পূর্বে ।তখন থাকে মেঘ মুক্ত আকাশ । রাতে তারার মেলা । চাঁদের আলোতে সুন্দর পরিবেশ দেখে ঝড়ের কথা শুনে মানুষের হাসি পায় । বিজ্ঞানের ঘোষণা সব বৃথা যায়না । ঝড় ঠিকই ই হয়।কখনও তা আমার এলাকায় ।কখনও তা অন্য এলাকায় । অনুরুপ করোনার কথা শুনেও সে হেসেছে ।এখন সেই করোনা তার তার আশ পাশ দখল করেছে ।
১৯৭০ সালের ১২ নভেম্বরের জলোচ্ছ্বাস ভোলা জেলাকে যেভাবে প্লাবিত করেছে গত পন্চাশ বছরে তা আর হয়নি । ভোলা জেলার দক্ষিন সীমানায় চরফ্যাসনের ভৌগলিক সীমানা বেষ্ঠিত বন বনানী আমাদের রক্ষা কবজ ।আল্লাহর মেহেরবানীতে সকল ঝড় ভোলা জেলার পূর্ব কিংবা পশ্চিম দিক ঘেষে প্রবাহিত হয়েছে । ইনশাল্লাহ আমফান থেকেও মহান আল্লাহ সেভাবেই আমাদের রক্ষা করবেন ।তবে নিজেকে সতর্ক রাখার দায়িত্ব নিজেকেই নিতে হবে ।সন্ধ্যা থেকেই ঘুমট অন্ধকার ।আকাশে মেঘ ,গুড়িগুড়ি বৃষ্টি , ধীরে বাতাস বাড়ছে । অথচ সকালের আকাশ দেখে বুঝা যায়নি , বিকালে সব বদলিয়ে যাবে ।
করোনার লক ডাউনে মানুষকে ঘর থেকে বের হতে নিষেধ করলে মানুষ ঘরে থাকতে চায়না ।আবার ঘূর্ণিঝড়ের সিগন্যালে মানুষকে ঘর থেকে বের হতে বললে মানুষ ঘরের বাহিরে আসতে চায়না ।এ এক আজব জাতি । মানুষ করোনা চোখে দেখেনা , মাঝে মধ্যে আলামত দেখে ,সতর্ক বার্তা শোনে ।রোগ শোক তাদের কাছে নিত্য নৈমত্রিক ঘটনার অংশ মাত্র । বরং করোনার উসিলায় তাদের ত্রাণ মিলছে ভাল ।
তেমনি ঘূর্ণিঝড় দেখেনা , সতর্কবার্তা শোনে , ঘূর্ণিঝড় প্রস্তুতি কর্ম সূচির স্বেচ্ছাসেবকদের তৎপরতা দেখে । ঝড় বৃষ্টি উপকূলীয় মানুষের কাছে যেন নিত্যদিনের ঘটনা ।বিগত দিনে বহু সিগন্যাল দেখেছে ।কিছুই হয়নি ।প্রকৃতির সাথে সংগ্রাম করে তাদের সাহস বেড়েছে । বরং ঝড় বৃষ্টির উসিলায় রিলিফ মিলেছে ভাল ।
আমাদের দেশের রেওয়াজ ,ত্রাণ পাবে গরীব লোক । করোনায় ক্ষতি গ্রস্ত কিংবা ঝড় বন্যায় ক্ষতি গ্রস্ত ব্যক্তি রিলিফ পেলে উজ্জতের শেষ । ঝড় বন্যায় গাছ গাছালী ,ফসল ফলাদি,,ঘর দুয়ারের ক্ষতি হয়েছে অবস্হা সমপন্ন লোকের ।গরীব লোকের ক্ষতি হয় কম । কিন্তু রিলিফ গবীর লোকের বাহিরে হওয়ার সুযোগ নেই ।করোনার ত্রাণও তাই গরীবের মধ্যেই করতে হয়েছে । ক্ষতি গ্রস্তের তালিকা কেউ করছেনা ।
১৯৮৪ সালের ১২ নভেম্বর চরফ্যাসন ঘূর্ণিঝড় প্রস্তুতি কর্মসূচির স্বেচ্ছাসেবক সম্মেলনে আমার লেখা নাটক “ঝড় ও জীবন “ চরফ্যাসন অডিটরিয়ামে মন্চস্থ হয়েছিল ।প্রধান অতিথি ছিলেন উপ পরিচালক হারুন আল রশিদ ,বিশেষ অতিথ ছিলেন আন্চলিক পরিচালক কে জে আহাম্মদ । তখন চররফ্যাসন সিপিপি সহকারি পরিচালক ছিলেন রফিকুল ইসলাম ।তারা আমার সম্মানে আমার গ্রাম আমিনাবাদে সিপিপি একটি ইউনিট অনুমোদন দিয়েছেন ।
১৯৮২ সালে অধ্যক্ষ নজরুল ইসলাম ঘূর্ণিঝড় প্রস্তুতি কর্মসূচির চরফ্যাসন উপজেলার সহকারি পরিচালক রফিকুল ইসলাম এর মাধ্যমে চরফ্যাসন কলেজে জিন্নাগড় ইউনিয়নের আওতায় একটি ইউনিট হিসেবে প্রতিষ্ঠা করেছেন ।তাঁর মৃত্যুর পর ইউনিটটি অনেকটাই ঝিমিয়ে পড়ে। ২০১৬ সালে এই ইউনিটটি এই কলেজের প্রাক্তন ছাত্র সহকারী পরিচালক মোকাম্মেল হক লিপনের সহযোগিতায় পূর্ণাঙ্গ ইউনিটে পরিনত করা হয় । আজ কলেজ ক্যাম্পাসে সাত নম্বর সিগনালের পতাকা উত্তোলন করা হয় । সুপার সাইক্লোন আমফান বাংলাদেশের উপকূল অন্চলে আঘাত হানবে বলে আবহাওয়া অধিদপ্তর নিশ্চিত করেছে । উপকূলে নিম্মান্চল পাঁচ থেকে দশ ফুট প্লাবিত হওয়ার সম্ভবনা্ভকথা জানানো হয়েছে ।ঘূর্ণিঝড় আমফানের মোকাবিলায় কলেজ ইউনিট এবং কলেজ ক্যাম্পাস প্রস্তুত রাখা হয়েছে ।
সিপিপি ইউনিটের স্বেচ্ছাসেবকদের মাঝে প্রয়োজনীয় অনেক সরন্জাামাদী দেয়া হয়েছে ।জীবন যখন ঝড়ের মুখে ,সিপিপি স্বেচ্ছাসেবকরা তখন ঘরের বাহিরে মানুষের পাশে থাকার চেষ্টা করেন । যেমনি আমরা যখন হোম কোয়ারেন্টাইনে নিজেকে নিরাপদে রাখার চেষ্টায় ব্যস্ত ,তখন মাঠ পর্যায় কাজ করেন দেশের নিবেদিত ডাক্তার ,নার্স ,, পরিচ্ছন্নতা কর্মী ,স্বেচ্ছাসেবক এবং মাঠ পর্যায়ের প্রশাসন ।
সকাল দশটায় আমার গ্রামের হাবিব পালোয়ানের নামাযে জানাযায় অংশ গ্রহন করি । তিনি হৃদক্রিয়া বন্ধ হয়ে হঠাৎ মারা যান । প্রচুর লোকজন নামাযে জানাযায় শরীক হয়েছেন । বিরাট মাঠ ।সবাইকে সামাজিক দুরুত্ব বজায় রেখে দাঁড়ানোর জন্য ইউনিয়ন চেয়ারম্যান মো: জামাল উদ্দিন অনুরোধ জানিয়েছেন ।কিনতু কারো মধ্যে করোনার কোন প্রতিক্রিয়া লক্ষ করা যায়নি ।
ঈদ কে কেন্দ্রকরে মানুষ ঝড় তুফান মোকাবিলা করে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বাড়ী ফিরার পথ খুঁজে বের করছে ।ফেরী বন্দ, লন্চ বন্দ ।কিন্তু থেমে নেই চলার গতি । জীবিকার টানে মানুষ গিয়েছে শহরে । এখন জীবনের টানে মানুষ ছুটছে বাড়ী। অবিরাম তার চলা।এ চলার পথ কোথায় ,কখন থামবে সে নিজেও জানেনা । (চলবে)