একজন উপস্থাপক, আরজে, অভিনেতা অথবা আরও কিছু উপাধি দেয়া যেতে পারে ইভান সাইর এর। নিজের সততা, দক্ষতা, পরিশ্রম আর মেধা দিয়ে যিনি এগিয়ে যাচ্ছেন দিনকে দিন। অনেক গুণে গুণান্বিত প্রতিভাবান তরুণ ইভান সাইর তার বর্তমান সময়ের কাজ আর নিজের ভাবনা নিয়ে খোলামেলা বলেছেন সবকিছু। সাক্ষাৎকারটি গ্রহণ করেছেন যাযাবর পলাশ।
সময়ের সংবাদ – চলমান করোনা পরিস্থিতিতে লকডাউন তুলে নেয়ার পর মিডিয়া পাড়া কিন্তু আবারও চাঙ্গা হচ্ছে ধীরেধীরে। শ্যুটিং হাউজ গুলোতেও বেশ ভীড় পরিলক্ষীত হচ্ছে। সেই ধারাবাহিকতায় আপনাকে আগের তুলনায় অভিনয় নিয়ে কম ব্যস্ত দেখা যাচ্ছে। কারণ কি?
ইভান – সত্যিই এই মুহুর্তে নাটক এর কাজে তেমন একটা ব্যস্ত নই আমি। বেছে বেছেও করছি ব্যাপারটা এমনও না। বেছে বেছে করতে হলে তো অনেক কাজের অফার থাকতে হয়। সেটা আমার নেই। তার বড় কারণ আমার ভিউ কম। নিজের ভিউ বাড়িয়ে নিতে পারলে অনেক কাজের অফার পাবো হয়ত (হাসি)। এগুলো কোন অভিযোগ না। এটাই বাস্তবতা। আমি এটা মেনে নিচ্ছি। কিন্তু এটা আমার ব্যার্থতাও নয়। তবে যেটুকু অফার পাচ্ছি বা ডাক আসছে তার মধ্যে বেছে চলছি। সেটা যদিও খুব সামান্য। কিন্তু তাতে কাজের সংখ্যা কম হলেও, আমি শান্তি পাচ্ছি। কারণ আমি যা করতে চাচ্ছি, সংখ্যায় কম হলেও তা করতে চেষ্টা করছি এখন। দেখুন আমি আসলে অভিনয়টা ভালবাসি। অভিনয়টা করতে চাই। এখন নাটকের নামে অভিনয় কম হচ্ছে। একই রকম সবকিছু। আর অনলাইনে শিল্পীরা নিজেরাই একটা অসুস্থ প্রতিযোগিতা করছে।
নিজেদের কাজের জন্য নিজেরাই সবকিছু ম্যানেজ করছে। অবশ্য আমিও সেই দলে ভিড়েছিলাম। টানা কাজও করেছি। কথিত সাফল্যও পেয়েছি। কিন্তু দিনশেষে শান্তি পাইনি। আমার মনে হয়, শান্তি আসলে যে যেটা করতে চায় তাতেই। এখন যে রকম কাজ হচ্ছে তা প্রায় সব একই রকম। আমিও এইসবের বাইরে না। কিন্তু আরও অনেক ধরণের কাজ হওয়া উচিত। গল্পের, ইতিহাসের, সুন্দর নামের, সংলাপের, আমাদের পারিবারিক মূল্যবোধের, সামাজিক মূল্যবোধের, শিশুদের জন্য। অভিভাবকহীন একটা অস্থির সময় পার করছি আমরা। সত্যিকারের গুণীজনেরা, মেধাবীরা, হয় হতাশ হয়ে পরছেন, না হয় চুপ করে সরে যাচ্ছেন। কেউ কারো দায়িত্ব নিতে চাইছেন না। কেউ কাউকে মানতে চাইছেন না। আরও একটা বড় ব্যাধি হল, শিল্পীর আর নির্মাতার সুষম বণ্টন হচ্ছে না। মাত্র কয়েকজনের কাছে জিম্মি সবাই।
সময়ের সংবাদ – আপনার কথায় অনেক অভিমানের আঁচ পাওয়া যাচ্ছে। কেন বলবেন কি?
ইভান – এটা অভিমান নয়। নিজেকে বুঝতে পারা। এইযে আমি এই কথাগুলো বললাম, তাতে অনেকেই আমাকে অনেক কটু কথা হয়ত বলবেন। এটাও বলবেন যে, আমি বেশী নাম করতে পারছি না বলে হয়ত হতাশায় এইসব বলছি। এভাবে একদল মানুষ মিলে সত্যি কথা বলা বন্ধ করে দিচ্ছে। আমি আমার কথা বললে, বলতে পারি আমি আমার মত কাজ করার চেষ্টা করছি। সময় শেষ হয়ে যায়নি। আমি খুব একটা পরিচিত মুখ নই। একদম সাধারণ মানুষের কাছে আমি এখনো পৌঁছতে পারিনি। কিন্তু আমি বিশ্বাস করি আমার কাজ ইনশাল্লাহ হয়ত একদিন মানুষের কাছে পৌঁছবে। আবার হয়ত কখনোই পৌঁছবে না। হয়ত অনেক দেরি হবে। কিন্তু ইনশাল্লাহ একবার পৌঁছে গেলে আর হারাবে না। থেকে যাবে।
সময়ের সংবাদ – যাইহোক, অভিনয়ের বাইরেও কিন্তু আপনার আরও কিছু পরিচয় রয়েছে। অন্যান্য ব্যস্ততা নিয়ে কিছু বলুন।
ইভান – আমি এখন রেডিও, উপস্থাপনা আর অভিনয় নিয়েই আছি। সাথে কণ্ঠ দেয়ার কাজও করছি। করোনা পরিস্থিতিতে নিজের সাথে অনেক কথা বলেছি আর বুঝতে চেয়েছি আমি কি চাই। নিজের প্রতি সৎ থেকেছি। আমি নিশ্চিত অভিনয় ভালোবাসি। কণ্ঠের মডুলেশান, সুন্দর সংলাপ, আমাদের ইতিহাস, সাহিত্য সমৃদ্ধ কাজ করতে চাই। ট্রেন্ডি কাজও করতে চাই। একটা কথা নিজের সাথে নিজে পরিষ্কার। যোগ্যতার বাইরে কিচ্ছু চাই না আমি। হুম, একটা জায়গায় পিছিয়ে আছি হয়ত। যোগাযোগের ক্ষেত্রে। মিডিয়ারও অনেকেই আমাকে চেনেন না। এটা আমার ব্যার্থতা। কিন্তু যারা জানেন, তারা ভালো করেই জানেন আমি অভিনয় ভালোবাসি। উপস্থাপনা আর রেডিওকে ভালোবাসি। এবং আমি আমার কাজের প্রতি সৎ। তাই আর বারবার মনে করিয়ে দিয়ে বিরক্ত বা বিব্রত করতে চাইনা কাউকে।
সময়ের সংবাদ – এইযে আপনি একদিকে অভিনেতা অন্যদিকে রেডিওতে আরজে হিসেবেও দারুণ জনপ্রিয়, পাশাপাশি উপস্থাপক হিসেবেও অনেক এগিয়ে। তো কোন পরিচয় টা বেশি ভালো লাগে বা দর্শক আপনাকে বেশি সাপোর্ট করে?
ইভান – ধন্যবাদ। আমি এগিয়ে বা জনপ্রিয় কি না জানিনা। আমার এখন পর্যন্ত মনে হয়, টেলিভিশন উপস্থাপনায় মানুষ আমাকে দেখতে পছন্দ করেন। রেডিওর শ্রোতা আলাদা। আমার যারা শ্রোতা তারা আমাকে ভালোবাসেন। এটা আমাকে শক্তি দেয়। নিজের মনের মত চরিত্র আর গল্পে অভিনয় করতে পারলে আমার হৃদয় শান্তি পায়। অভিনেতা হিসেবে গ্রহণযোগ্যতা পেলে আমার মন ভালোলাগবে। সব আল্লাহ ভালো জানেন।
সময়ের সংবাদ – চলমান কাজ নিয়ে কিছু বলুন।
ইভান – সামনে আমার দুই তিনটা নাটক প্রচারের অপেক্ষায়। এছাড়া রেডিও, টেলিভিশন উপস্থাপনা চলছে। কিছু নাটক, শর্ট ফিল্মের কাজ করছি এবং করবো ইনশাল্লাহ। যারা আমাকে পছন্দ করেন তারা নিশ্চয়ই কাজগুলো দেখবেন আর সমর্থন করবেন। আমি চেষ্টা করবো সবসময় ভালো আর ভিন্ন কিছু কাজ করার জন্য। নিজেকে নিয়ে আরও কাজ করতে হবে। নিজের প্রতি যত্নবান হতে হবে। করোনা পরিস্থিতি দিয়ে আমরা কিংবা পৃথিবী এখনো মুক্ত নই। তাই সেদিকেও নজর রাখতে হবে। কারণ বেঁচে থাকলে ইনশাল্লাহ অনেক কাজ করা যাবে।
সময়ের সংবাদ – এইযে এতো কাজ নিয়ে ব্যস্ততায় থাকেন, শত ব্যস্ততার মাঝেও অবসর তো নিতে হয়, কিভাবে উপভোগ করেন?
ইভান – আমার ভালোলাগে ভালো ভালো সিনেমা দেখতে। আমি অনেক সিনেমা দেখি। বিশেষ করে ইতিহাস নির্ভর, সারভাইভাল, ট্রাভেল বেইজড সিনেমা আমার খুব পছন্দ। এছাড়া আমি ফুটবলের ভীষণ ভক্ত। বিশেষ করে রোনালদো, রিয়েল মাদ্রিদ, ব্রাজিল নিয়ে আমার আবেগের মাত্রাও আলাদা। হ্যাঁ, আমি জীবনকে খুব পজিটিভলি দেখি। নিজের মত থাকতে, ভাবতে, চলতে পছন্দ করি। কাউকে বিরক্ত করিনা বা কারো জন্য আমি ক্ষতিকর নই। যাকে ভালোলাগে না এড়িয়ে চলি, বিবাদে জড়াই না। অনেক জায়গায় ইচ্ছে করে বোকা হয়ে থাকি বা চুপ করে থাকি। ইদানিং প্রয়োজনে প্রতিবাদ করি। অবশ্য আমাদের সমাজে চুপচাপ থাকলেও তাকে মানুষ অহংকারী বলে (হাসি)। আমি তাদের সাথেই সময় কাটাই, যাদের সাথে আনন্দ পাই। এটা খুব জরুরী। আমি প্রতিনিয়ত বোঝার চেষ্টা করি, ঠিক কতটুকুতে আমি খুশী বা ভালো আছি। সেটুকু হলেই ভালো থাকি আলহামদুলিল্লাহ্।
সময়ের সংবাদ – আগামীর পরিকল্পনা নিয়ে যদি কিছু বলতেন।
ইভান – অভিনয়, উপস্থাপনা ভালোবাসি। আলহামদুলিল্লাহ্ কাজও করে যাচ্ছি। যে কাজটুকু আমাকে আনন্দ দেয়, বা আমি যা করতে চাই, তাই করাটা এখন আমার মুল লক্ষ্য। জনপ্রিয়তা বা পরিচিতি আমার হাতে নেই। আল্লাহ্ সব ভালো জানেন। আমি শুধু নিজের কাজটা করে যেতে চাই। বাকি সব সময় বলে দিবে। আমি মানুষের যেমন ভালোবাসা চাই, তেমনি সম্মানটাও চাই। আপনাকে অনেক ধান্যবাদ।