গোলাম মোস্তফা, নিজস্ব প্রতিবেদক, সময়ের সংবাদ:
শনিবার তাড়াশের নওগায় শতাব্দী প্রাচীন বউ মেলা অনুষ্ঠিত হয়েছে। শশ বছরের পুরানো রীতি অনুসারে এবারও চৈত্র মাসের প্রথম বৃহস্পতি, শুক্র ও শনিবার হযরত শাহ্ শরীফ জিন্দানীর (রহঃ) রুহের মাগফিরাত কামনায় তিন দিন ব্যাপী ওরশ শরীফ শেষের দিনে উৎসবমুখর পরিবেশে দিন ব্যাপী এ বিশাল মেলা অনুষ্ঠিত হয়। ঐতিহ্যবাহী বউ মেলায় বেলা বাড়ার সাথে সাথে লাখো মানুষের ঢল নামতে শুরু করে। উপজেলার নওগা ইউনিয়নের নওগা মাজার প্রাঙ্গনে এ মেলা নতুন বউদের পাশাপাশি কিশোরী, যুবতী, গৃহবধু, বৃদ্ধা, দর্শনার্থী এবং উৎসুক হাজারো জনতার মিলন মেলায় পরিণত হয়।
মেলা উপলক্ষে নওগাসহ আশপাশের পচিশ ত্রিশটি গ্রাম স্বজনে ঠাঁসা হয়ে ওঠে। মেয়ে-জামাই ও নাতি-নাততি, আত্মীয়-স্বজন এবং বন্ধু বান্ধবকে দাওয়াত করা হয়। মেলায় নারীদের প্রসাধনী ছাড়াও নানা ধরনের তৈজসপত্র, শিশুদের খেলনাসহ সংসারের কাজে ব্যবহৃত সব ধরনের পণ্যসামগ্রী বিক্রি হয়।
রংবেরংয়ের সাজে সজ্জিত হয়ে পুরানো সইদের সাথে নিয়ে হাসি-তামাশা করে বিভিন্ন সাজ-গোজের জিনিস ক্রয় করেন নববধু ও তরুনীরা। দলবেঁধে আসেন নতুন বউদের পাশাপাশি কিশোরী, যুবতী, গৃহবধু ও বৃদ্ধারা। কিনে থাকেন কসমেটিক্স সামগ্রী, চুড়িমালাসহ নিত্য ব্যবহার্য্য বটি, বেলনা, পিড়ে, কুলা, ধামা, পাখা, চালনা, পাটি, ঝাড়– ও বিভিন্ন ধরনের খেলনা।
এ সময় নববধু রুমা, গৃহবধু সর্ণালী, বৃদ্ধা রমিছা বেগমসহ আরো অনেকেই জানান বছর জুড়ে আমাদের তেমন একটা বাড়ির বাইরে আসা হয়না। মেলাকে উপলক্ষ করে অনেক পুরানো সইদের সাথে দেখা হয়েছে। কথা হয়েছে আত্বীয় স্বজনদের সাথে। মেলায় আনন্দ উপভোগের পাশাপাশি নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রও কিনে থাকি। তাই প্রতিবছর আমরা এই দিনটির জন্য অধির আগ্রহে অপেক্ষা করি।
কিশোরী রোজিনা খাতুন, মিতু সরকার, বন্যা খাতুন, সাবিনা পারভিন, সেতু রাণী কিনেছেন নেইলপলিস, মাথার ব্যান্ড, কাঁচের চুড়ি। ছোট ভাই-বোনের জন্য কিনেছেন বাঁশি, বেলুন, পটকা এবং মুখরোচক সব খাবার। পড়ালেখার চাপ আর সংসারে কাজ থাকলেও সারা বছর অপেক্ষা শেষে মেলায় ছুটে আসেন আজকের এই দিনটিতে।
বউ মেলা আয়োজক কমিটির সভাপতি রাজ্জাক আহমেদ জানান শশ বছরের পুরানো রীতি অনুসারে এলাকার নারীদের নিত্য প্রয়োজনীয় সামগ্রী এবং গৃহস্থালী সরঞ্জামাদী কেনাকাটার জন্য প্রতিবছর ওরশ শরীফের শেষের দিন এ মেলার আয়োজন করা হয়। মেলায় অধিকাংশ ক্ষেত্রে নারীরাই বেচি-কিনির সুযোগ পেয়ে থাকেন।
ক্রেতা-বিক্রেতা ও দর্শনার্থীসহ লাখো মানুষের উপচে পড়া ভিড়ে ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনা আর নানা আনন্দ আয়োজনে মধ্য দিয়ে শান্তিপূর্ণভাবে শেষ হয় শতাব্দী প্রাচীন ঐতিহ্যবাহী নওগার বউ মেলা।