সিরাজগঞ্জের তাড়াশে টায়ার কারখানায় গাড়ির পরিত্যক্ত টায়ার পুড়িয়ে ফার্নিস ওয়েল উৎপাদন করা হচ্ছে। কিন্তু এর বিরূপ প্রভাবে পরিবেশের ব্যাপক বিপর্যয় ঘটে চলেছে। বিশেষ করে, ফসল হানি হচ্ছে। একই সাথে বাড়ছে স্বাস্থ্য ঝুঁকি। জানা গেছে, দেশীগ্রাম ইউনিয়নের প্রত্যন্ত উত্তর শ্যামপুর গ্রামের শালিয়াগাড়ি গ্রামীণ সড়কের পাশে মেসার্স দেশ গড় নামের টায়ার কারখানাটি গড়ে তোলা হয়েছে। এই কারখানার চারপাশে রয়েছে ফসলি জমি। কারখানার সামান্য দূরত্বে উত্তর শ্যামপুর, শ্যামপুর, সুয়ারা ও বলদি পাড়া গ্রামে কয়েক হাজার মানুষের বসবাস। তাছাড়া টায়ার কারখানার পাশের কাটাগাড়ি থেকে শালিয়াগাড়ি সড়ক দিয়ে প্রতিদিন অসংখ্য মানুষ চলাচল করেন। বলদি পাড়া গ্রামের বেল্লাল হোসেন নামে এক ব্যক্তির জমি ১০ বছরের চুক্তিতে ইজারা নিয়ে কারখানাটি গড়ে তোলা হয়েছে।
উত্তর শ্যামপুর গ্রামের ক্ষুদ্র বর্গা চাষী কৃষক নারয়ন চন্দ্র মাহাতো, বাসুদেব মাহাতো, খিধির মাহাতো ও অধির মাহাতো বলেন, এক মহাজনের ১৫ বিঘা জমি বর্গা নিয়ে চাষ আবাদ করি আমরা। জমিগুলো টায়ার কারখানার আশপাশে। বৃষ্টির পানির সাথে টায়ার পোড়ানো বর্জ্য ও তেল আবাদি জমিতে ছড়িয়ে পড়ে। তখন ফসল নষ্ট হয়ে যায়। গত আমনের মৌসুমে মাত্র ৫ থকে ৬ মণ করে ধানের ফলন হয়েছে বিঘা প্রতি। অনেকে এক মুঠো ধানও পায়নি। আগে এসব জমিতে ১৮ থেকে ২০ মণ ধান পাওয়া যেত। কারখানার মালিক নাসির উদ্দীন ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের জরিমানা দেওয়ার কথা বলেছিলেন। কিন্তু এক জনও টাকা পাইনি অদ্যাবধি।
সুুয়ারা গ্রামের গৃহবধূ শ্রীমতি ফুলমনি ও রঞ্জনা রানী বলেন, আগে দিনের বেলায় টায়ার পোড়ানো হত। কিন্তু কালো ধোঁয়া ও উদ্ভট গন্ধ সহ্য করতে না পেরে স্থানীয়রা বাধা দেয়। তারপর সন্ধ্যা থেকে ভোর বেলা পর্যন্ত টায়ার পুড়িয়ে তেল উৎপাদন করা হয়। টায়ার পোড়ানো মেশিন চালানোর সঙ্গে-সঙ্গে চারিদিকে উদ্ভট গন্ধ ছড়িয়ে পড়ে। এতে খাওয়া ও ঘুমের চরম ব্যাঘাত ঘটে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, টায়ার কারখানার ভেতরে টায়ার পোড়ানো মেশিন পরিস্কার করছেন মিলন ও আলহাজ নামে ২ জন শ্রমিক। কারখানার অন্যান্য কাজ করছেন আরও ৮ জন। টায়ার কারখানার মধ্যে কয়েক জায়গাতে গর্ত করে বিপুল পরিমাণে বর্জ্য রাখা হয়েছে। বৃষ্টি হলেই বর্জ্যগুলো বোরো খেতে গড়িয়ে পড়বে নিশ্চিত।
এদিকে মেসার্স দেশ গড় টায়ার কারখানার ম্যানেজার আব্দুল বাছেদ বলেন, টায়ার কারখানায় কাজের শুরুতে একটু শারীরিক সমস্যা দেখা দেয়। পরে ঠিক হয়ে যায়। অসাবধানতা বশত: কয়েকজন কৃষকের ধানের ক্ষতি হয়েছিল। পর্যায়ক্রমে ক্ষতি পূরণ দেওয়া হবে।
মেসার্স দেশ গড় টায়ার কারখানার মালিক নাসির উদ্দীন বলেন, রাতে টায়ার পুড়িয়ে তেল উৎপাদন করলে পরিবেশ ও জন স্বাস্থ্যের তেমন ক্ষতি হয়না। তাছাড়া এই তেল দেশ গড়ার কাজেই ব্যবহৃত হচ্ছে। আমরা পরিবেশ অধিদপ্তরের অনুমোদন নেওয়ার চেষ্টা করছি।
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মো. মনোয়ার হোসেন বলেন, টায়ার কারখানার বিষাক্ত ধোঁয়া ও ক্ষতিকর রাসায়নিকের কারণে শ্বাসকষ্ট, সর্দি, বমি ভাবসহ বিভিন্ন ধরনের জটিল রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
সিরাজগঞ্জ পরিবেশ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক মো. আব্দুল গফুর বলেন, মেসার্স দেশ গড় টায়ার কারখানার পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র নাই। বিধায় শোকজ করা হয়েছে।
এ প্রসঙ্গে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মেজবাউল করিম সময়ের সংবাদকে বলেন, টায়ার কারখানার অবস্থা দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।